Ajker Patrika

কবির মূল্যায়ন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২, ১০: ২১
কবির মূল্যায়ন

আবু ইসহাক ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটি লিখে শেষ করেছিলেন ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে। ঢাকা ও কলকাতার প্রকাশকেরা সেটা ছাপতে চাননি। সিভিল সাপ্লাইয়ের চাকরিটা ছাঁটাই শুরু হলে চলে যায়। পুলিশে চাকরি জুটল, ১৯৪৯ সাল কাটল প্রশিক্ষণে। শিক্ষানবিশ সাব-ইন্সপেক্টর পদে যোগ দিলেন তেজগাঁও থানায়। দাঙ্গার সময় কয়েকজন সেপাইসহ হিন্দু গ্রাম রায়েরবাজারে অস্থায়ী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হলে তিনি সেখানকার দায়িত্ব পান।

একদিন বিকেলে কবি জসীমউদ্‌দীন রায়েরবাজারে এলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা সভায়। বিকেলে সে সভায় আবু ইসহাকও বক্তব্য দিলেন। জসীমউদ্‌দীন শুনলেন আবু ইসহাকের কয়েকটি গল্প ছাপা হয়েছে সওগাত, আজাদের মতো পত্রিকায়। জসীমউদ্‌দীন বললেন, ‘আপনার ভাষা এত সুন্দর, পুলিশের লোক সাহিত্যসাধনা করে, এ তো ভাবাই যায় না।’ তারপর বললেন, ‘না না, দু-একজন আছেন, যেমন সৈয়দ এমদাদ আলী, সা’দত আলী আখন্দ।’

‘আমি একটা উপন্যাস লিখেছি, কিন্তু প্রকাশক পাচ্ছি না।’ বললেন আবু ইসহাক।

গুরুত্ব না দিয়ে জসীমউদ্‌দীন বললেন, ‘লিখতে থাকুন, লিখতে লিখতে হাত পাকা হবে।’

‘একদিন পাণ্ডুলিপি নিয়ে আপনার বাসায় যাব?’

‘তা আসুন একদিন। রোববার নয়টা-দশটার দিকে আসবেন।’

গেলেন আবু ইসহাক। তত দিনে কবি তাঁকে তুমি বলে ডাকতে শুরু করেছেন। দুই অধ্যায় শুনে বললেন, ‘তোমার লেখার হাত ভালো। লিখতে লিখতে ভালো লেখা এসে যাবে।’

মন খারাপ করে ফিরলেন লেখক।

গোলাম মোস্তফার ‘নওবাহার’ মাসিক পত্রে উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯৫১-৫২ সালে। কলকাতা-ঢাকায় সাড়া জাগায় উপন্যাসটি। এর মধ্যে কবির সঙ্গে আর দেখা হয়নি। ১৯৬০ সালে কবির সঙ্গে দেখা হলে কবি বলেন, ‘ভাই ইসহাক, আমি তোমার ওপর সুবিচার করিনি। তোমার উপন্যাসের কিছুটা পড়ে শুনিয়েছিলে। অতটুকু শুনে তখন উপন্যাসটির মূল্যায়ন করতে পারিনি। এ জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইব কি, আমি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।’

সূত্র: আবু ইসহাক, জসীমউদ্‌দীন জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৩৩-৩৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত