Ajker Patrika

জ্বালানির প্রভাব নিত্যপণ্যে

শামীমুজ্জামান, খুলনা
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৪
জ্বালানির প্রভাব নিত্যপণ্যে

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় বেড়েছে পরিবহনের ভাড়া। এর প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের দামেও। পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে খুলনার বাজারে বেড়েছে চাল ও সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। এর ফলে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর থেকে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়। লোকসান ঠেকাতে মালিকেরা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলে রোববার রাত থেকে পরিবহন চলাচল শুরু হয়। সেই সময় থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

নগরীর রয়্যাল মোড়ের টুঙ্গিপাড়া বাস কাউন্টারের টিকিট ম্যান কামরুল ইসলাম স্বপন জানান, রাত থেকে তাদের পরিবহন চলাচল করছে। তবে প্রতিটি টিকিটে আগের ভাড়া থেকে ১০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ননএসি বাসে প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হতো, এখন সেখানে ৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

ঈগল পরিবহনের ম্যানেজার দারা জানান, ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের ভাড়া নিলে পরিবহন চালানো খুব দায় হয়ে পড়বে। তিনি আগের ভাড়ায় যাত্রী বহন করছেন। তবে আজ সন্ধ্যায় খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার নতুন চার্ট আসবে, এটা এলে আমাদের তা কার্যকর করতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বড়বাজারের খেলনা ব্যবসায়ী ফয়সাল জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এই প্রথম ঢাকায় যাওয়া তার। ১০০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট ক্রয় করেছেন। ঢাকায় গিয়েও বেশি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হবে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও তাঁকে বেশি ভাড়া গুনতে হবে।

কথা হয় নগরীর বাসিন্দা গোলাম রসুলের সঙ্গে। তিনি টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে যাচ্ছেন। টিকিট ভাড়ার কথা শুনে তিনি অবাক হয়ে যান। ১৫ দিন আগে তিনি ৫০০ টাকায় ঢাকা গেছেন। আর আজ তাকে ৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

লঞ্চের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। সকাল ১০টায় নগরীর নতুন বাজার লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় এর বাস্তব চিত্র। তখন এমভি মোহাম্মদীয় কোম্পানির একটি লঞ্চ কয়রার উদ্দেশে যাত্রা করে। লঞ্চের টিকিট মাস্টার এ প্রতিবেদককে জানান, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদেরও ভাড়া বাড়াতে হয়েছে।

এক দিন লসে মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আজ থেকে নতুন ভাড়ায় যাত্রী বহন করতে হচ্ছে। না হলে মালিক মারা যাবে। গিলাবাড়ি পর্যন্ত একজনের ভাড়া আগে যেখানে ১০০ টাকা ছিল, সেখানে এখন ১২০ টাকা করে প্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনালে কয়েকজন আড়তদার কাঁচা মালের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছেন। মেসার্স বাণিজ্য ভান্ডারের মালিক আব্দুল মালেক মিয়া জানান, ফরিদপুর, চান্দেরহাট, নগরকান্দা ও মোকছেদপুরসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে তিনি পেঁয়াজ ক্রয় করেছেন।

ডিজেলের প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়েছে বেশ। আগে যেখানে এ পণ্য খুলনা পর্যন্ত আনতে তার সাত থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতো, এখন ক্ষেত্রবিশেষে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তাই বেড়েছে পণ্যের দাম।

গতকাল সোমবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ মানভেদে ৫২ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেগুন ৭০, শিম ১০০, ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অথচ গত বুধবারও প্রতি কেজি চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৭৫ টাকা। একইভাবে বেগুন ৫০ থেকে ৬০, শিম ৮০ থেকে ৯০, ফুলকপি বিক্রি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হতো।

এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। নগরীর ছোট বয়রাবাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দফায় দফায় পণ্যের দাম বাড়ছে, কিন্তু আয়তো বাড়ছে না। সাধারণ মানুষ বাঁচবে কীভাবে?

জেলা বাজার কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। যে কারণে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে চালসহ সবজির দাম। তবে এ মাসের শেষ সপ্তাহ মৌসুমি সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে তিনি মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত