Ajker Patrika

দুটি গুলি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ১৫
দুটি গুলি

আবদুল জব্বার থাকতেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে। পড়াশোনা এগোয়নি। পনের বছর বয়স পর্যন্ত বাবাকে চাষবাসে সহযোগিতা করছিলেন। এরপর বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি একদিন ট্রেনে চড়ে নারায়ণগঞ্জে চলে এলেন। নারায়ণগঞ্জের জাহাজঘাটেই এক সাহেবের সঙ্গে দেখা হলো আবদুল জব্বারের। সাহেবের সহায়তায় একটি চাকরি নিয়ে জব্বার চলে গেলেন বার্মায়। সেখানে আয়ত্ত করলেন ইংরেজি ভাষা। সেখানে ১২ বছর থেকে দেশে ফিরে এলেন।

তত দিনে বিয়ে করেছেন জব্বার। তাঁর স্ত্রীর নাম আমেনা খাতুন ও ছেলের নাম নূরুল ইসলাম বাদল। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি এলেন ঢাকায়। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আর শাশুড়ি। ক্যানসার-আক্রান্ত শাশুড়িকে ভর্তি করিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তখন চলছে ভাষা আন্দোলন।

একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি আবদুল হাইকে নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করার জন্য হাসপাতালে যান। বেলা ২টায় আবদুল জব্বার মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে আসেন ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে। সে সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশ এবং ছাত্র-জনতা মারমুখী অবস্থান নেয়।

ডক্টর সিরাজের সঙ্গে কথা বলে আবদুল জব্বার বেলা ৩টার পর রাস্তায় বের হন এবং ছাত্র-জনতার মিছিলে মিশে যান। পুলিশ তখন ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রথমে গুলি লাগে আবদুল জব্বারের ডান হাঁটুতে। একের পর এক গুলি চলতে থাকলে ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে শুরু করে। আবদুল জব্বার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আরেকটি গুলি এসে তাঁর কোমরে লাগে। ছাত্র-জনতা তাঁকে ধরাধরি করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা অপারেশনের আগেই তাঁর জীবনের আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। হাঁটু থেকে গুলি বের করা হয় কিন্তু কোমরের আঘাতকে কোনোভাবেই চিকিৎসকেরা সামাল দিতে পারেননি। রাত ৮টার পর আবদুল জব্বারের মৃত্যু হয়। আজিমপুর গোরস্থানে তাঁর দাফন হয়।

সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, ভাষাশহীদদের কথা, কিশোর আলো, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত