Ajker Patrika

মায়ের গয়না বেচে যুদ্ধযাত্রা

তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ০৪
মায়ের গয়না বেচে যুদ্ধযাত্রা

‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমার হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। সেই ভাষণ শোনার পর আর বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম অত্যাচার ও অগ্নিসংযোগ দেখে সিদ্ধান্ত নেই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার। তখন আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। এলাকার দুই বড় ভাইকে জানাই তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যাব। কিন্তু সেই বড় ভাইয়েরা আমাকে না বলে গভীর রাতে চলে যান। এরপর এলাকার আরও কয়েকজনকে বুঝিয়ে মায়ের পাঁচ আনা স্বর্ণের গয়না মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি করে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাত্রা শুরু করি।’

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন পীরগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী সরকার। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক এই কমান্ডারকে এখনো মুক্তিযুদ্ধের কষ্টের স্মৃতিগুলো পীড়া দেয়। তিনি আজও ওকড়াবাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ আবদুল মজিদ আকন্দের কথা ভুলতে পারেননি।

ওয়াজেদ আলী জানান, তাঁরা ১৭ জন একসঙ্গে কাউনিয়ায় তিস্তার দুর্গম চর হেঁটে পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্ত হয়ে ভারতে যান। সেখানে কোম্পানি কমান্ডার মোসলেম উদ্দিনের অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ঢুকেন। এরপর ৬ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার খাদেমুল বাশারের অধীনে প্লাটুনে ভাগ হয়ে লালমনিরহাটের দইখাওয়া, তিস্তা, কাউনিয়ার মধুপুরসহ রংপুরের অনেক স্থানে সশস্ত্র সংগ্রাম করেন। কখনো বেলায়েত হোসেন আবার কখনো মোসলেম কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন।

ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর ওকরাবাড়িতে অবস্থানকালে খবর পাই পাকিস্তানি সেনারা চৌধুরাণী থেকে রংপুরের দিকে রওনা দিয়েছে। পরিকল্পনা করি লোহার ব্রিজে অ্যামবুশ পেতে তাদের জীবন্ত আটক করব। ৩০ জনের মতো পাক সেনা আমাদের অবস্থান টের পেয়ে সাইডে অবস্থান নেয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে দুই ঘণ্টারও অধিক সময় যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে কৌশল হিসেবে আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করি। সেখানে সহযোদ্ধা আবদুল মজিদ আকন্দ স্থানত্যাগ করতে না পেরে আটকে যায় এবং পাক সেনারা তাঁকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এই স্মৃতি আজও আমাকে কাঁদায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত