Ajker Patrika

লালন আবাসন বিলুপ্তির শঙ্কা

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৪৫
লালন আবাসন বিলুপ্তির শঙ্কা

আবাসন এলাকা থেকে বালু তোলার কারণে গত বর্ষায় কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের লালন আবাসনে ভাঙন লেগেছিল। দেরিতে হলেও ভাঙনরোধে সেখানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে আবাসনবাসীর ভাঙনের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আতঙ্কও বাড়ছে।

এদিকে ভাঙনের আতঙ্ক না কাটলেও ওই এলাকা থেকে আবারও বালু তোলা শুরু হয়েছে। এতে আগামী বর্ষায় আবাসন এলাকাটি বিলুপ্তির আশঙ্কা সেখানে বসবাসকারীদের।

গতকাল সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, লালন আবাসন থেকে প্রায় ৪০০ মিটার পূর্বে এবং গড়াই নদীর ওপর যদুবয়রা নির্মাণাধীন সেতু থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে পশ্চিমে দুইটি ভেকু দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এই বালু আবার ইঞ্জিনচালিত লাটাহাম্বা গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হচ্ছে।

বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাসুদ রানা নামের এক বালু ব্যবসায়ী নদীর ওই অংশটি প্রায় ২৭ লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। ইজারাসূত্রে এখন তাঁরা বালু তুলছেন।

রফিকুর নামের এক কর্মচারী বলেন, ‘২৭ লাখ টাকা দিয়ে মাসুদ ভাই এ জায়গা ইজারা নিয়েছেন। ইজারার বালু কাটছি আমরা। তাতে কার কি ক্ষতি হলো সেটি আমাদের দেখার বিষয় না।’

আবাসনবাসী সূত্রে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে আবাসনসংলগ্ন এলাকা থেকে অতিরিক্ত বালু তোলার কারণে চলতি বছরর জুলাই মাসের দিকে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। ভাঙন দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে চলাচলের একমাত্র রাস্তাসহ চারপাশ প্লাবিত হয়েছিল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল প্রায় ৫১ টি পরিবার। গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন আমলে নেয়। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে প্রায় দেড় মাস আগে জিওব্যাগ ফেলে।

আবাসন এলাকা থেকে বালু তোলা বন্ধ করা না গেলে আগামী বর্ষায় লালন আবাসন-৪ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে গত ৪ আগস্ট ‘লালন আবাসনে নদীভাঙন’ ও ২৬ জুলাই ‘ভাঙনের মুখে লালন আবাসন প্রকল্প’ শিরোনামে আজকের পত্রিকায় দুইটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প হাসদিয়া লালন আবাসন-১, পৌর লালন আবাসন-২, নন্দলালপুর লালন আবাসন-৩ যদুবয়রা লালন আবাসন ৪ নির্মিত হয়। প্রতিটি আবাসনে ৬০ টি করে মোট ২৪০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় হাঁসদিয়া আবাসনের ৫১ টি ঘর। বর্তমানে তিন আবাসনে ১৮৯ টি ঘরে শতাধিক পরিবারের বসবাস।

এ বিষয়ে যদুবয়রা লালন আবাসন-৪ এর সাধারণ সম্পাদক আকুল মণ্ডল বলেন, ‘গত বছর অতিরিক্ত বালু তোলার কারণে আবাসন এলাকায় ভাঙন লেগেছিল। ভাঙনের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। আবার বালু তোলা শুরু হয়েছে। আগামী বর্ষায় আর টিকা যাবে না এখানে।’

আবাসনের সভাপতি শাজাহান বলেন, ‘এ বছর আবাসনের পাড় ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছিল। আমরা পানিবন্দী ছিলাম। বালু কাটা বন্ধ না হলে আবাসন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, ‘স্থানটির ইজারা পেয়েছি ২৭ লাখ টাকায়। প্রশাসনের দেখানো স্থান থেকেই বালু তোলা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, গতবার বালু তোলার ফলে আবাসনে ভাঙন লাগার অভিযোগ পেয়েছিলাম। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারও বালু তোলা হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত