Ajker Patrika

টি-শার্টে লাল-সবুজ বাংলাদেশ

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৩
টি-শার্টে লাল-সবুজ বাংলাদেশ

পুরো পৃথিবীতে টি-শার্ট এখন তারুণ্যের পোশাক। একদিকে আরাম, অন্যদিকে বাহারি নকশার বৈচিত্র্য। এ দুটি গুণের কারণে তরুণেরা টি-শার্টকে প্রতিদিনের পোশাকের জায়গায় নিয়ে গেছেন। তারুণ্যের এ পোশাকে যখন ইতিহাস আর ঐতিহ্য যোগ হয় নকশার অনুষঙ্গে, তখন তা আর নিছক পোশাক থাকে না। হয়ে ওঠে প্রতীক। লাল-সবুজ যেমন বাংলাদেশের প্রতীক।

একটা সময়ে, বিশেষ করে বিজয় দিবসের মতো বিশেষ দিনগুলোয় শাড়ি ও পাঞ্জাবিই ছিল উপযোগী পোশাক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধারণাও বদলে গেছে বলা চলে। বিশেষ দিনের পোশাক হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়ের আলমারিতেই সগর্বে জায়গা করে নিচ্ছে টি-শার্ট।

বিগত বছরগুলোয় চোখ রাখলে দেখা যায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বিজয় দিবসকে মাথায় রেখে পোশাকের নকশা করেছে। এবারও বিজয় দিবস উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাশন হাউস টি-শার্টের নকশা করেছে। নকশা করা টি-শার্টের মধ্যে এপ্লিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট ও এমব্রয়ডারির কাজ প্রাধান্য পাচ্ছে। বিজয় দিবসের জন্য টি-শার্টে লাল-সবুজ রঙের প্রাধান্য থাকলেও সাদা, কালো, ছাই রঙের ওপরও কাজ করা হয়েছে।

আমাদের দেশে টি-শার্টকে সুদৃশ্য করে মানুষের প্রতিদিনের আরামদায়ক পোশাকের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রথম যে নামটি বলতে হয়, সেটি নিত্য উপহার। তাদের টি-শার্টে বাংলাদেশের পতাকার প্রতিরূপ দেখা যায়। নিত্য উপহারের স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান বলেন, ‘দেশীয় ঘরানার স্মারক তৈরির এক গভীর চেষ্টা ছিল এটি। টি-শার্টে বাংলাদেশের পতাকাকে তুলে ধরার পেছনে অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রতিক্রিয়া, কোনো ঘটনায় সংবেদনশীলতার প্রতিফলন রয়েছে।’

বাহার রহমান পতাকার নকশায় টি-শার্ট বানানোর পেছনের গল্প জানালেন। ২০০৪ সালে স্লোভাকিয়ার তরুণ টমাস বিরস তাঁর স্নাতক শেষে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। নীলক্ষেতের পুরোনো বইয়ের দোকানে টি-শার্ট পরিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে দেখে জানতে চান, ‘কোথায় পাব?’ তাঁর কাছ থেকে সূত্র পেয়ে টমাস বিরস বাহার রহমানের সামনে হাজির হন। বলেন, ‘তোমাদের পতাকা ফুটে ওঠে, এ রকম কোনো স্যুভেনির, টি-শার্ট নেই?’ বাহার জানতে চান, বিরস কত দিন এ দেশে থাকবেন? সম্ভব হলে সে সময়ের মধ্যে তিনি তৈরি করে দেবেন বাংলাদেশের পতাকার নকশায় তৈরি করা টি-শার্ট। কিন্তু সে সময় আর সুযোগ হয়নি। তবে সঙ্গে করে দুটি টি-শার্ট নিয়ে যান বিরস। আরও একটির দাম অগ্রিম দিয়ে যান। সে বছর মে অথবা জুনে পাঠানো হয়েছিল সেই টি-শার্ট। সেটাই ছিল নিত্য উপহারের শুরু।

 নিত্য উপহারে এবার শিল্পী আনাহিদ জাফরির নকশায় ‌‘১৯৭১-২’, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পকর্মে ‘বাংলাদেশ-২’ ও নিত্য উপহারের নিজস্ব শিল্পকর্মে ‘পতাকা-৪’ নামে তিনটি টি-শার্ট এসেছে। এগুলো বড়দের ব্যবহারযোগ্য টি-শার্ট। এই টি-শার্টগুলো ছাড়াও নিত্য উপহারের অন্যান্য টি-শার্ট সংগ্রহ করা যাবে শাহবাগ ও মোহাম্মদপুর বিক্রয়কেন্দ্র থেকে। বড়দের এই টি-শার্টগুলোর মূল্য ৪৩০ টাকা এবং ছোটদের টি-শার্টের মূল্য শুরু ২৫০ টাকা থেকে। নিত্য উপহারের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও অর্ডার করা যাবে টি-শার্টগুলো।

নিত্য উপহার ছাড়াও এখন অনেক ফ্যাশন হাউসই টি-শার্টে লাল-সবুজ ও পতাকা নিয়ে কাজ করছে। বিজয়ের ৫০ বছর উদ্‌যাপনে ‘যথাশিল্প’ লাল-সবুজ পতাকা ও মাত্রচিত্রের মোটিফে দুটি টি-শার্ট এনেছে। শতভাগ সুতির এই টি-শার্টগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের উপযোগী। দাম ৪৭৫ টাকা। এ ছাড়া নকশীকাঁথার নকশায় এসেছে সবুজ ও কালো রঙের দুটি টি-শার্ট। বুকের ওপর নকশার নিচেই নকশীকাঁথার ফোঁড়ের আদলে লেখা আছে বাংলাদেশ। এই টি-শার্টের দামও যথারীতি ৪৭৫ টাকা।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ এবার তাদের টি-শার্টের সংগ্রহে রেখেছে লাল, সবুজ ও লেমন রঙের তিনটি টি-শার্ট। স্ক্রিনপ্রিন্টের টি-শার্টগুলোর দাম ৫০০ টাকা।

আজিজ সুপার মার্কেটে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডুয়েটের আউটলেটে লাল-সবুজে বিভিন্ন টি-শার্ট পাওয়া যাবে। এসব টি-শার্টের দাম ছোটদের ক্ষেত্রে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা ও বড়দের জন্য ৩০০ টাকা। দেশীদশের ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফট ও বিবিয়ানায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য টি-শার্ট পাওয়া যাবে ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।

এখন চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো ব্র্যান্ডের টি-শার্ট ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব। সে জন্য ব্র্যান্ডগুলোর ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজের ইনবক্সে অর্ডার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত