Ajker Patrika

সিত্রাংয়ের ক্ষত ঘোচেনি আজও

ইসমাইল হোসেন কিরন, হাতিয়া (নোয়াখালী)
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪: ০১
সিত্রাংয়ের ক্ষত ঘোচেনি আজও

কনকনে শীত। শূন্য ভিটার ওপর ত্রিপল দিয়ে তাঁবু তৈরি করে বাস করছেন তাঁরা। উঠানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে জোয়ারের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া ঘরের আসবাব-জিনিস। পাশে কয়েকটি নারকেলগাছ দাঁড়িয়ে আছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের চিহ্ন নিয়ে। তীব্র ঝড়ে কয়েকটি গাছের মাঝখানে ভেঙে যাওয়া অংশ শুকিয়ে গেছে।

জোয়ারের তোড়ে বাড়ির ভিটামাটিতে এখনো বড় বড় গর্তের চিহ্ন। পাশে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা চালবিহীন ঘরে চলছে রান্নার কাজ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে আবুল কালামের পরিবারের বর্তমান অবস্থা এটি।

গত ২৫ অক্টোবর বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ভিটামাটি হারায় পরিবারটি। মৎস্যজীবী আবুল কালাম সে সময় রাতের জোয়ারের তীব্রতা বেশি দেখে সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান।

সকালে বাড়ি ফিরে দেখেন, শূন্য ভিটা ছাড়া কিছুই নেই। পরে কুড়িয়ে কিছু আসবাব পেয়েছেন এখানে-সেখানে। কিন্তু সিত্রাংয়ের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ করতে পারেননি ঘরটি। আর্থিক অবস্থা দুর্বল থাকায় ভিটার ওপর নৌকায় ব্যবহৃত ত্রিপল খাটিয়ে কোনোমতে বাস করছে সাত সদস্যের পরিবারটি। শুধু আবুল কালামের পরিবার নয়, নিঝুম দ্বীপের এই ওয়ার্ডের মুন্সি গ্রামের অনেকের চিত্র একই।

২৪ ডিসেম্বর সকালে নিজ বাড়িতে দেখা হয়, জেলে আবুল কালামের সঙ্গে। মাছ ধরার জন্য বাড়ির পাশে জাল মেরামত করছিলেন তিনি।

আবুল কালাম জানান, তিন ছেলে, এক নাতি, এক ছেলের বউ ও স্ত্রীকে নিয়ে সাত সদস্যের পরিবার তাঁর। ছেলেরা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। উপার্জন না থাকায় ঘরটি মেরামত করতে পারেননি তিনি। নিজেদের নৌকায় ব্যবহার করা দুটি ত্রিপল এনে কোনোমতে শূন্য ভিটার ওপর বাস করতে হচ্ছে। রাতে প্রচণ্ড শীতে ঘুমানো যায় না। কুড়িয়ে পাওয়া কয়েকটি কাঠের অংশ মাটিতে পেতে তার ওপর কাঁথা বিছিয়ে শুতে হয় তাঁদের। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।

আবুল কালামের বাড়ির পাশেই বসবাস করেন জেলে জাহার হোসেন (৬০)। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় জোয়ারের পানিতে তাঁর ঘরটি ভেসে যায়।

জাহার হোসেন জানান, বাজারের পাশে বড় ছেলের বাড়ি থেকে কিছু গাছ কেটে এনে ঘর মেরামতের কাজ করছেন। ঘরের ভিটার ওপর কাঠের পালা ও চালা লাগিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ২০ দিন ধরে ঘর নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি অর্থের অভাবে ঘরে টিন লাগাতে পারছেন না। ঝড়ের পর থেকে এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বড় ছেলের বাড়িতে বাস করছেন। ঝড়ের পর সরকারের ১০ কেজি চাল ছাড়া কিছুই পাননি বলে জানান জাহার।

মুন্সি গ্রামের অনেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে নিঝুম দ্বীপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই গ্রামের বাসিন্দারা। নদীর একবারে তীরে হওয়ায় বাতাস ও জোয়ারের প্রথম ধাক্কাটা লাগে এখানে।

বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারের ছয়-সাত ফুট পানির নিচে তলি যায় পুরো গ্রামটি। একদিকে উচ্চ জোয়ার, অন্যদিকে তীব্র বাতাস ছিল সেদিন।

নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা বাজার থেকে পূর্বদিকে গেলে দেখা যায়, অনেকে ঘর মেরামত করছেন। কেউ ভিটার ওপর দোচালা ঘর তৈরি করছেন। এখানে বেশির ভাগ মানুষ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

নিঝুম দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য চাঁন মিয়া বলেন, সিত্রাংয়ে এই গ্রামটি একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অনেকে এখনো ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেননি।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন বলেন, সিত্রাংয়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনকে শুকনো খাবার দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়; যা প্রতিটি ইউনিয়নে ভাগ করে দেওয়া হয়। তবে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতির একটি তালিকা পাঠানো হলেও কোনো বরাদ্দ আসেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত