Ajker Patrika

‘বিদ্রোহী’র শত বছর

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ০৭
‘বিদ্রোহী’র শত বছর

কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের জাতীয় কবি। তিনি অসংখ্য প্রেমের কবিতা ও কালজয়ী গান, গল্প-প্রবন্ধ লিখলেও ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত ও খ্যাত। ছোটবেলায় নজরুল ইসলামের ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম হয়নি তাঁর। দুঃখ-কষ্টেই তিনি বড় হয়েছেন। দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। বেঁচে থাকার জন্য নানা কিছু করতে হয়েছে তাঁকে। পাউরুটি তৈরির দোকান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীতে ‘হাবিলদার’ হওয়া। ফাঁকে ফাঁকে কোনো দরদি মানুষের সহায়তা-সহযোগিতায় স্কুলে কিছু পাঠ গ্রহণ করেছেন; কিন্তু তাতে কোনো সার্টিফিকেট অর্জিত হয়নি।

কিছুটা ভবঘুরে কিংবা বাউণ্ডুলে স্বভাবের দুখু মিয়া যে একদিন অসংখ্য মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন, সেটা তখনো বোঝা যায়নি। হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম যখন লেখালেখি শুরু করেন, তখনো তেমন কারও নজর কাড়তে পেরেছিলেন বলে মনে হয় না। তবে ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এক রাতে ‘বিদ্রোহী’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখে নিজের নাম চিরস্মরণীয় করার ক্ষেত্র তৈরি করেন কাজী নজরুল ইসলাম। কবিতাটি রচনাকালে কবির বয়স ছিল ২২ বছর। বিদ্রোহী প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায়। তারপর মাসিক মোসলেম ভারত, প্রবাসী ইত্যাদি সাময়িকীতেও কবিতাটি ছাপা হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পরই নজরুলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। নানা কারণে বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারায় এক উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম এই কবিতা। তবে ‘মোল্লা-পুরুত’সহ প্রতিষ্ঠিত কবিদের কেউ কেউ নজরুলের নিন্দা-সমালোচনাও কম করেননি। কিন্তু কবিতার বক্তব্য এতটাই শক্তিধর যে এর সমালোচকেরা হালে পানি পাননি। সব ধরনের পাঠকের মনে প্রবল আবেগ ও আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছিল বিদ্রোহী কবিতা।

মানুষের মধ্যে এই কবিতার বিধ্বংসী ও সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মাতোয়ারা বক্তব্য ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। কবিতায় সাহস ও শৌর্যের যে বাণী অকপটে উচ্চারিত হয়েছে, তা স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী মানুষের মনে এমন ঢেউ তুলেছিল, যা শত বছরেও এতটুকু স্তিমিত হয়নি। এখনো প্রতিবাদী মানুষের মুখে বিদ্রোহী কবিতার লাইন উচ্চারিত হয় গভীর আবেগের সঙ্গে।

বল বীর–

বল উন্নত মম শির!

শির নিহারি’ আমারি নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির...!

দীর্ঘ কবিতার শুরুর এই শব্দগুলো উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায়। ‘আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা’... কিংবা ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য’... লাইন পাঠ করার সময় এর সঙ্গে একাত্ম বোধ করেন না—এমন পাঠক বিরল।

‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারের খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না–

বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত।’

তেমন দিন না আসা পর্যন্ত ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আবেদনও শেষ হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত