Ajker Patrika

স্বাধীনতার ৫৩ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

সম্পাদকীয়
স্বাধীনতার ৫৩ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

এ বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তি। ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম বিজয়ের লাল সূর্য। আমাদের স্বাধীনতা শুধু একটি ভূখণ্ডের ছিল না, সেই স্বাধীনতা ছিল একটি চেতনার, একটি সংগ্রামের ও একটি ইতিহাসের। সেই স্বাধীনতার উদ্‌যাপন সীমাবদ্ধ নয় শুধু একটি দিবস পালনের মধ্যে; বরং তা প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে নিহিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ক্রমেই সরে গেছি এবং যাচ্ছি।

প্রতিবছর গৌরবময় এ দিনটি পালন করতে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়, স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাধনা আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া। জাতীয় জীবনে আমাদের অর্জন কতটুকু আর আমাদের অবস্থান কোথায়, সেসব মিলিয়ে দেখা। সেদিক থেকে স্বাধীনতা দিবসের এ দিনটি আমাদের আত্মসমালোচনার, হিসাব মেলানোর এবং আত্মজিজ্ঞাসার দিন।

পেছন ফিরে তাকালে এই ৫৩ বছরে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়। ১৯৭১ সালে জন্মের সময় পৃথিবীর অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত দেশ ছিল বাংলাদেশ। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে আজ তা নেমে এসেছে ২০ শতাংশের নিচে, যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে নির্দেশ করে।

পাকিস্তান আমলে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের মূল কথা ছিল বৈষম্যের অবসান। কিন্তু স্বাধীনতার পর সেই বৈষম্য আরও বেড়েছে। কতিপয় লোকের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছায়নি। আমরা যদি একটি ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। এর পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারে কারচুপি, সরকারি সম্পদ লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারসহ যেসব অনাচার চলছে, তা কোনোভাবেই স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি কাঠামোগত উন্নয়নও দৃষ্টিসীমার মধ্যে দেখা যায়। আমরা এখন যোগাযোগের ক্ষেত্রে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা পাচ্ছি। ৫৩ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পৌঁছেছে। উদ্যোক্তা হিসেবে বহু খাতে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। বহির্বিশ্বে আমাদের তরুণেরা কঠোর পরিশ্রম, কর্মকুশলতা ও সততার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। পাশাপাশি তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

কিন্তু এত সব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু অন্তরায় আমাদের অগ্রযাত্রাকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে। যেমন সমাজের ক্রমবর্ধমান অসমতা আমরা কমিয়ে আনতে পারছি না। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও অসমতা বিদ্যমান। সামাজিক ক্ষেত্রে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় প্রকটিত; আত্মকেন্দ্রিকতাও বেড়েছে। আগের মতো সামাজিক যূথবদ্ধতা দেখা যায় না। আমাদের সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হ্রাস পেয়েছে। সমাজে সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিস্তৃতি ঘটেছে।

স্বাধীনতা ঘোষণার এই দিনে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে দেশবাসীকে জানাই অভিনন্দন। আশা করি, পরিশ্রম ও মেধার সম্মিলনে আমরা একদিন সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে স্বাধীনতার সুফল লাভ করতে পারব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

জোহরান মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, চেহারা বাজে ও বুদ্ধি কম: ট্রাম্প

সারজিস আলমের পোস্ট: সেই সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান

সমীক্ষা-সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ২০ হাজার কোটির দুই প্রকল্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত