Ajker Patrika

জীবনযুদ্ধে জয়ী রেশমা তারুণ্যের প্রেরণার উৎস

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ৫২
জীবনযুদ্ধে জয়ী রেশমা তারুণ্যের প্রেরণার উৎস

মানুষের জীবনের প্রতিটি সমস্যার পেছনেই আছে সম্ভাবনা। আর তা কাজে লাগিয়েছেন বগুড়ার শেরপুরের সুরাইয়া ফারহানা রেশমা। স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গত বছর শেরপুর উপজেলা ও বগুড়া জেলার জয়িতা পদক অর্জন করেছেন। তাঁর এ সাফল্য এখন এলাকার তরুণ-তরুণীদের প্রেরণার উৎস।

উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের বোঙ্গা গ্রামের পরিবার পরিকল্পনা সহকারী হুসনেয়ারা বেগমের মেয়ে রেশমা। কৃষিকাজে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চাষ করছেন সুপারি, পেঁপে ও সবজি। এ ছাড়া শুধু কেঁচো কম্পোস্ট থেকেই প্রতি মাসে আয় করছেন হাজার হাজার টাকা।

অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা তাঁর। রেশমার যখন দুই মাস বয়স, তখন তাঁর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদের পর রেশমাকে নিয়ে মা বাবার বাড়ি চলে আসেন। সেই থেকে মায়ের কাছেই বেড়ে ওঠা তাঁর। সংসার চালাতে রেশমার মা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ১ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে মাঠকর্মী হিসেবে যোগ দেন। অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক কষ্টে লেখাপড়া করার পর ১৫ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়।

এরপরও মেলে না স্বস্তি। রেশমা জানতেন না তাঁর স্বামী একজন মাদকাসক্ত ও জুয়াড়ি। স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে তালাক দিয়ে রেশমা চলে আসেন মায়ের কাছে। এরপর শুরু হয় তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম।

মায়ের কাছে এসে রেশমা শুরুতেই নিজেকে পোশাক ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দর্জির প্রশিক্ষণ নেন। এরপর দুটি গরু দিয়ে শুরু করেন ছোট্ট খামার। এর পরও নতুন কিছু করার জন্য সবসময় চিন্তায় থাকতেন। হঠাৎ মাথায় আসে জৈব সারের মাধ্যমে কীটনাশকমুক্ত কৃষির কথা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ত্রাণ হিসেবে শৌচাগার তৈরির চারটি চাক পেয়েছিলেন। সেটা দিয়েই শুরু করেন কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদনের কাজ। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই বই পড়ে প্রাথমিকভাবে সফল হন। এরপর আর তাঁকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এখন তাঁর ১৩৫টি চাক ও ৩০টি ক্যারেটে কেঁচো আছে। পাশাপাশি তিনি মাছ ও হাঁস-মুরগির প্রাকৃতিক খাবার ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইও উৎপাদন করছেন। এসব তিনি ব্যবহার করছেন তাঁর নিজস্ব মাছের ও দেশি মুরগির খামারে এবং সবজি চাষে। এখন তিনি মাসে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা উপার্জন করেন।

উদ্যোক্তা সুরাইয়া ফারহানা রেশমা বলেন, ‘জীবনে অর্থ উপার্জন করাটাই শেষ কথা নয়। আমার লক্ষ্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা। সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।’

শেরপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সুবির কুমার পাল জানান, সুরাইয়া ফারহানা রেশমা একজন সংগ্রামী নারী। তিনি শূন্য থেকে সফলতার শিখরে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে তিনি শেরপুর উপজেলা ও বগুড়া জেলার ‘জয়িতা’ পদক অর্জন করেছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তাঁর এই অর্জন দেশের কৃষক ও কৃষাণীদের জন্য অনুকরণীয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

শান্ত যে কারণে টি-টোয়েন্টি দলে, মিরাজ কেন নেই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত