Ajker Patrika

সিসার বিষে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

রোবেল মাহমুদ, গফরগাঁও
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ৪৫
সিসার বিষে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

গফরগাঁওয়ের লংগাইর ইউনিয়নের পশ্চিম গোলাবাড়ি রেললাইনের পাশের এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে সিসা কারখানা। এ কারখানা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাটারির কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সিসা গলিয়ে পরিবেশ নষ্ট করায় বিষাক্ত এই ধাতুর কারখানাটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাসখানেক আগে গড়ে তোলা হয়েছে সিসা কারখানা। প্রতিদিন ২৫-৩০ জন শ্রমিক কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করার কাজ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বল্পমূল্যের ব্যাটারিচালিত মোটরযানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় লেড-অ্যাসিড ব্যাটারির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় সব লেড অ্যাসিড ব্যাটারি পুরোনো ব্যাটারি পুনঃচক্রায়ন এবং ফেলে দেওয়া ধাতু থেকে তৈরি হয়। ব্যাটারির সিসা পুনরায় ব্যবহারোপযোগী করা যায়।

পুরোনো ব্যাটারি গলিয়ে সিসা সংগ্রহ করা হয়। এই সিসা ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম ও মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র উজ্জ্বল করতে সিসার প্রলেপ দেওয়া হয়।

কারখানার শ্রমিক বিল্লাল ও সিরাজের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকেরা সংগ্রহ করা পুরোনো ব্যাটারি খুলে অ্যাসিড সংগ্রহ করেন। পরে কাঠ-কয়লার চুলার ওপর অ্যাসিড মেশানো পুরোনো ব্যাটারির অংশ সাজিয়ে তা আগুনে দিয়ে গলিয়ে সিসা বের করা হয় বলে তাঁরা জানান।

এলাকাবাসী জানায়, গোলাবাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ সিসার কারখানায় ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুরোনো ব্যাটারি কিনে তা গলিয়ে সিসা বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে বিপুল চাহিদার কারণে জমি ভাড়া নিয়ে কারখানা স্থাপন করেছেন নুর মিয়া। তাঁর বাড়ি গাজিপুর তেলিহাটি গ্রামে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই কারখানাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।

এ পরিস্থিতিতে দ্রুত অবৈধ সিসা কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে এ ব্যাপারে কারখানার মালিক নুর মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্তার মিয়া বলেন, ‘ব্যাটারি পোড়ানোর সময় ঝাঁজালো গন্ধ আর ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় ভালো করে নিশ্বাস নেওয়া যায় না। পোড়া ব্যাটারির গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে।

স্থানীয় লংগাইর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লব বলেন, ‘ব্যাটারি কারখানা এই ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। কখনো স্থান পরিবর্তন করে পাশের ইউনিয়নে বর্জ্য পোড়ানোর কাজ করে। স্থানীয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমিতি ছাড়া কেউ এমন কারখানা স্থাপন করতে পারে না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাইনুদ্দিন খান মানিক বলেন, ‘ব্যাটারির বর্জ্য থেকে আগুনের মাধ্যমে সিসা তৈরির কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের শরীরের ফুসফুস, রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আইন অমান্য করে পরিবেশের ক্ষতি করায় কারখানার মালিককে ইতিমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে। মালিক পক্ষকে সতর্ক করে দিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত