Ajker Patrika

শীতে চাই উষ্ণ শাল

রিক্তা রিচি, ঢাকা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১২: ০২
শীতে চাই   উষ্ণ শাল

বিমূর্ত এই রাত্রি আমার

মৌনতার সুতোয় বোনা

একটি রঙিন চাদর।…

শরীরে চাদর জড়ানো থাকত। এসব স্মৃতির ওপর ভর করেই ধীরে ধীরে চাদর ফ্যাশনের অংশ হয়ে ওঠে। এখন পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে চাদরের রং নির্বাচন করা হয়। ফ্যাশন ডিজাইনারেরা চাদরের নাতিদীর্ঘ জমিনে ফুটিয়ে তোলেন প্রাণ ও প্রকৃতির বিভিন্ন রঙিন অনুষঙ্গ। শীত কিছুটা ফ্যাকাশে ঋতু বলেই হয়তো চাদর রঙিন হয়ে ওঠে।

এখন যেকোনো চাদরকে শাল বলা হয়। আদতে শাল আর চাদর দেখতে এক রকম হলেও এর বুনন উপাদানে তফাত আছে। ভারতের কাশ্মীর থেকে আসা বিশেষ ধরনের ছাগলের পশম থেকে বানানো চাদরই শাল। সেটাকে পশমিনা বলা হয়। তা ছাড়া শালগুলো আয়তাকার, বর্গাকার বা ত্রিভুজাকৃতির হতে পারে। কিন্তু চাদর আয়তাকার। ফলে আমরা যেগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো সাধারণভাবে চাদর।

সে যা-ই হোক। একসময় চাদরের জমিনে হাতে ফুটিয়ে তোলা হতো বিভিন্ন নকশা। এখন ক্রেতাদের চাহিদার কথা ভেবে ফ্যাশন ডিজাইনাররাই সেগুলো নকশাদার করে তুলছেন। তৈরি করছেন বিভিন্ন থিমেটিক নকশার চাদরও। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা, হ‌ুমায়ূন আহমেদের হিমু, জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতা কিংবা মান্না দের বিখ্যাত গান ‘কফি হাউস’, লালনের গানের চরণ, খনার বচন, কী নেই চাদরের নকশা ও থিমে! তা ছাড়া ফুল পাখি, লতাপাতা ও জ্যামিতিক বিভিন্ন নকশা তো আছেই।

ফ্যাশন হাউস শরদিন্দু নিয়ে এসেছে নতুন কিছু চাদর। সেগুলোকে তারা শালই বলছে। কিছু শালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভ্যান গগ ও কালজয়ী চিত্রশিল্পীদের আঁকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম। আবার কিছুতে মূর্ত হয়ে উঠেছে বাগানবিলাস, শিউলি, মর্নিং গ্লোরি, মধুমালতী ফুল ও ক্ল্যাসিক কোনো বইয়ের পাতার নকশা। সুতি সুতার টাইডাই করা শালও নিয়ে এসেছে শরদিন্দু। এগুলো পাওয়া যাবে মাত্র ১ হাজার ৬০০ টাকায়।

ফ্যাশন হাউস ‘পালকি’র স্বত্বাধিকারী সুমাইয়া মিমি বলেন, ‘পালকিতে শীতের জন্য হাতে বোনা উলের শাল আনা হয়েছে। উলের শালগুলোয় করা হয়েছে ব্লক প্রিন্ট। প্রিন্টের মধ্যে রয়েছে চারুলতা, রেডিও, নারীর প্রতিকৃতি, তারের ওপর বসে থাকা পাখির ঝাঁক, সূর্যের হাসি ইত্যাদি। উজ্জ্বল ও গাঢ় রংকেই প্রাধান্য দিয়েছে পালকি।’

সুমাইয়া মিমি জানান, তাঁদের প্রতিটি ডিজাইন নিজস্ব। মাত্র ৫৭০ টাকায় পাওয়া যাবে পালকির চাদর বা শালগুলো।

‘নন্দনকানন’-এর উদ্যোক্তা কান্তা সরকার বলেন, ‘নন্দনকানন মূলত ভিসকস ম্যাটেরিয়ালসের ওপরে স্ক্রিন প্রিন্ট ও কারচুপির কাজ করা শাল তৈরি করেছে শীতের জন্য।’ কটনের ওপরে ব্লক প্রিন্ট, নকশিকাঁথা শাল, পার্বত্যাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা কিছু উলের শালও রয়েছে নন্দনকাননে। দাম ৬৫০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।

‘ইচ্ছে রং’-এর ডিজাইনার ও স্বত্বাধিকারী মারিয়া জান্নাত রিমি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি হাতে বোনা উলের শালে স্ক্রিন প্রিন্ট ডিজাইন নিয়ে। মূলত পছন্দের বিভিন্ন চরিত্র, সিনেমা, পছন্দের কার্টুন চরিত্রগুলোকে টার্গেট করে ডিজাইন করে থাকি।’

মারিয়া জান্নাত রিমি জানিয়েছেন, ইচ্ছে রং-এর নকশার মধ্যে রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের ১৫টি বইয়ের প্রচ্ছদের নকশা, এ শহর জাদুর শহর, মান্না দের বিখ্যাত গান ‘কফি হাউস’ থিমের স্ক্রিন প্রিন্ট, হ‌ুমায়ূন আহমেদের হিমু থিম, জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার থিমে গ্রাম বাংলার দৃশ্যকল্পের স্ক্রিন প্রিন্ট করা শাল। এগুলো পাওয়া যাবে ৫৭০ থেকে ৬৬৫ টাকার মধ্যে।

‘তন্দ্রাবতী’ নিয়ে এসেছে উলেন মিক্সড কটন শালের ওপর স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ করা শাল। রয়েছে লালনের মনের মানুষ থিম, আমিই বাংলাদেশ, খনার বচনের থিম। তন্দ্রাবতীতে পাওয়া যাচ্ছে সুতার কাজের শালও। দাম ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে।

বৃষ্টিতে ভেজা ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি, রং চা, প্রজাপতি, জামদানি ইত্যাদি থিমের শাল নিয়ে এসেছে ‘কইন্যা’। কইন্যার সত্ত্বাধিকারী বাধন মাহমুদ বলেন, আমরা এবার সবই উলে বুনেছি। বরাবরের মতোই আমরা দেশি মোটিফে প্রাধান্য দিয়েছি এবারো। প্রিন্টের ক্ষেত্রে জামদানি রিকশা পেইন্ট নিয়ে কাজ থাকছে। দাম ৫৮৫ থেকে ৬৫৫ টাকার মধ্যে।

নকশাদার ও থিমেটিক এসব চাদর বা শাল শাড়ি, কুর্তি, টপস, সিঙ্গেল কামিজ, সালোয়ার-কামিজ সবকিছুর সঙ্গেই পরা যাবে। লালনের থিমের শাল, কবিতা থিমের শালগুলো শাড়ি ও পাঞ্জাবির সঙ্গে বেশ মানিয়ে যাবে। সঙ্গে উষ্ণতাও ছড়াবে।

মডেল: সুমাইয়া মঈন। ছবি: রনি বাউল

মেকআপ: স্পা ব্রাইডাল

ছবি: রনি বাউল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত