Ajker Patrika

মহাসড়কে নিরাপত্তা: পুলিশের ৩ সংস্থার ঠেলাঠেলিতে জনজীবনে ভোগান্তি

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১: ১৮
মহাসড়কে নিরাপত্তা: পুলিশের ৩ সংস্থার ঠেলাঠেলিতে জনজীবনে ভোগান্তি

গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা থেকে মালবোঝাই কাভার্ড ভ্যান চালিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন। চট্টগ্রামের বারইহাট এলাকায় মহাসড়কের এক পাশে গাড়ি থামিয়ে বিরতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় কাভার্ড ভ্যানের কিছু অংশ ভেঙে যায়। পরে পুলিশের সহযোগিতা চাইতে গেলে টহলরত পুলিশ জানায়, এটি তাদের এখতিয়ারে নয়। পরদিন বারইহাট পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে তারা হাইওয়ে পুলিশের কাছে যেতে বলে। পরে হাইওয়ে পুলিশ জানায়, এলাকাটি তাদের অধীনে নয়। শেষ পর্যন্ত মামলা না করেই ফিরে যান নাজমুল।

সিলেট মহানগরের বালাগঞ্জ এলাকায় গত ১৮ মার্চ একটি কাভার্ড ভ্যান দুর্ঘটনায় পড়ে। চালক মো. ইউসুফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহাসড়কে ঘটনাটা ঘটে। কাদের এলাকায় হয়েছে, তা জানতাম না। সিলেটে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে প্রথম কথা হয়। তারা জানায়, এলাকাটি তাদের নয়। পরে জানতে পারি, ঘটনাস্থলটি মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে।’

জানা যায়, দেশের ২১ হাজার ৮৮৮ কিলোমিটার মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশ। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জৈনাবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের টঙ্গী থেকে ভোগড়া অংশ হাইওয়ে পুলিশের অধীনে। ভোগড়া থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত গাজীপুর মহানগর পুলিশের অধীনে। আর রাজেন্দ্রপুর থেকে জৈনাবাজার পর্যন্ত জেলা পুলিশের অধীনে। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী, মহাসড়কে দুর্ঘটনা, চোরাচালান ও মাদক উদ্ধারের দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের।

মহাসড়কে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মামলা ও অপরাধস্থল নির্ধারণের কাজ করে থানা-পুলিশ। ফলে সহায়তার প্রয়োজন হলে পুলিশের কোন সংস্থার কাছে যাবে, তা খুঁজে বের করতেই বেগ পেতে হয় বাসচালক, মালিকসহ ভুক্তভোগীদের।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘মহাসড়কের কোথাও হাইওয়ে পুলিশ, কোথাও জেলা বা থানা-পুলিশ আবার কোথাও মেট্রোপলিটন পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মামলা করতে গেলে কার কাছে যাব, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়।’

গত ফেব্রুয়ারিতে হাইওয়ে পুলিশ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায়ও বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, মহাসড়কের একেক অংশ পুলিশের একেক সংস্থার অধীনে থাকায় দুর্ঘটনা বা অপরাধ হলে ভুক্তভোগীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। পুরো মহাসড়ক হাইওয়ে পুলিশের অধীন হলে এই ভোগান্তিটা দূর হবে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দেশের ২ হাজার ৯৯০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার মহাসড়ক হাইওয়ে পুলিশের অধীনে। ২ হাজার ৮৭৪ জন সদস্য নিয়েই হাইওয়ে পুলিশকে এই দায়িত্ব সামলাতে হয়।

পুরো মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আছে কি না, জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহাবুদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ হাইওয়ে পুলিশের অধীনে হলে এ ক্ষেত্রে জনবল, অবকাঠামোগত বিষয়গুলো দিতে হবে। আমাদের ইউনিটের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যে ৩ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের জন্যই ২টি রিজিওন, ১টি ট্রেনিং সেন্টার, ৩০টি সার্কেল ও ৬৮টি থানার জন্য ৬ হাজার জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

ওসমান আলী বলেন, পুলিশের এক ইউনিটের নিয়ন্ত্রণে থাকলে ভোগান্তি কম হবে। মহাসড়কের যেসব অংশ জেলা পুলিশের অধীনে রয়েছে, সেসব অংশ যেন হাইওয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান বলেন, ‘দাবিটির যৌক্তিকতা আছে। এটি বাস্তবায়ন করতে হবে, আমাদের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত