Ajker Patrika

কুষ্টিয়ায় নজরুল

কাজী নজরুল ইসলাম
আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ১৮
কুষ্টিয়ায় নজরুল

১৯২৯ সালে রাজনৈতিক সফরে কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন নজরুল। সেটা ছিল কৃষক সম্মেলন। কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ, আবদুল হালীম, গ্রেট ব্রিটেনের ফিলিপ স্প্যাটও যোগ দিয়েছিলেন সেই সভায়। কবি তাঁর স্ত্রী প্রমীলা, শাশুড়ি গিরিবালা দেবী, ছেলে বুলবুল ও সব্যসাচীকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের সঙ্গে সেটাই ছিল নজরুলের এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেষ রাজনৈতিক সভা।

অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন নজরুল। সমবেত শ্রোতারা শুনতে চাইছিলেন নজরুলের গান, নজরুলের কবিতা। নজরুল ‘কৃষকের গান’, ‘জেলেদের গান’, ‘শ্রমিকের গান’ গেয়েছিলেন দরাজকণ্ঠে। ‘এনকোর’ এনকোর’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল গোটা হলঘর।

সভা শেষে মুজাফ্ফর আহমদেরা চলে গেলে নজরুল গেলেন গড়াই নদের অপর পারে হাটশ হরিপুর গ্রামে। সেটা বসন্তকাল এবং রমজান মাস চলছে। নদের চরে শিকার করতে গিয়েছিলেন কবি। একটা হরিয়াল আর একটি ঘুঘু পাখি শিকার করা হয়েছিল। কবির নির্দেশমতো তা রান্না হয়েছিল বেশি ঝাল আর কম ঝোল দিয়ে। সন্ধ্যায় চা-পর্বের পর শুরু হলো গানের আসর। এখানে কবি গাইলেন ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’, ‘আসে বসন্ত ফুলবনে’, ‘চল চল চল,’ ‘বাজল কিরে ভোরের সানাই’সহ অনেকগুলো গান। তারাবির নামাজের পথে রওনা দেওয়া মুসল্লিরা নজরুলের গান শুনতে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরদিন আবার গান হবে।

কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে এরই মধ্যে সলাপরামর্শ করে নেন নজরুল। পরদিন সকালে দেখা গেল কবি নেই। কবির বিছানা শূন্য, সঙ্গে এসেছিলেন হেমন্তবাবু আর নিশিকান্তবাবু, তাঁদের বিছানাও শূন্য। খবর রটে যাওয়ায় সাইকেল নিয়ে ছুটল একজন খেয়াঘাটে। মাঝি বলল, প্রথম খেয়াতেই কবি বন্ধুবান্ধবসমেত চলে গেছেন। কবি চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ‘মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা’য় কুষ্টিয়ার কয়েকজন কর্মী গ্রেপ্তার হন। কেউ কেউ মনে করেন, সম্ভাব্য গ্রেপ্তার এড়াতেই কবি এভাবে চলে গিয়েছিলেন।

সূত্র: আবুল আহসান চৌধুরী, অজ্ঞাত নজরুলের সন্ধানে, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত