Ajker Patrika

প্রসূতি সেবাপ্রার্থীরা এবার সরকারি হাসপাতালমুখী

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৪৪
প্রসূতি সেবাপ্রার্থীরা এবার  সরকারি হাসপাতালমুখী

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতিসেবা বেড়েছে। সেবার মান বাড়ায় সরকারি হাসপাতালটির প্রতি আস্থা বেড়েছে গর্ভবতী নারী ও স্বজনদের। আগে প্রসবের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় থাকলেও এখন অনেকেই সরকারি এই হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। হাসপাতালটিতে স্বাভাবিক ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গত সাড়ে তিন মাসে সন্তান জন্মদানের তুলনামূলক চিত্রে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৭০ জন গর্ভবতী নারী এখানে সন্তান জন্ম দেন। এর মধ্যে ৪০ জনের স্বাভাবিক প্রসব হলেও ৩০ জন অস্ত্রোপচারের (সিজার) মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ৩৪৪ জন প্রসূতি সন্তান জন্ম দেন। এর মধ্যে ১৭৯ জন স্বাভাবিক ও ১৬৫ জন নারী অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসব করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেন উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর মো. নুর নবীর স্ত্রী সালমা আক্তার (২০)। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বিনা খরচে সরকারি হাসপাতালে সেবাটি নিতে পেরে তাঁরা নতুন করে ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন। সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে চিকিৎসকদের উৎসাহী করাটা তাঁদের ধারণার মধ্যে ছিল না।

উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের উত্তর রায়পুর গ্রামের কৃষক মো. শাহাদাত হোসেন। তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (৩০) গর্ভবতী অবস্থায় সম্প্রতি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান প্রসব করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকের আগ্রহেই তাঁর স্ত্রীকে সরকারি হাসপাতালে প্রসব করাতে নেন। সেখানে স্বাভাবিক প্রসব না হলে সিজারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। নবজাতক ও প্রসূতির চিকিৎসায় কোনো অর্থই খরচ করতে হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেশিয়া) মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমাদের একটি ভালো মানের অস্ত্রোপচার কক্ষ ও যন্ত্রপাতি রয়েছে। চালু করা হয়েছে পোস্ট ও প্রি-অপারেটিভ সেবা। প্রসবজনিত জরুরি সেবা টিম গর্ভবতীর সেবার মান বাড়াতে সচেষ্ট রয়েছে। প্রসূতিরা এখানে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের আওতায় সহায়তাও পাচ্ছেন। আমরা গর্ভবতীদের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অর্থ খরচ না করে আমাদের এখানে বিনা মূল্যে সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করছি।’

এদিকে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক ও সিজার প্রসব বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট তা বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা চায় না​ এ সেবাটি সরকারি হাসপাতালে অব্যাহত থাকুক। এতে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে তারা অস্ত্রোপচারসংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও সেবক-সেবিকাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির উপজেলা শাখার সভাপতি ইজাজ হোসেন রুমান বলেন, ‘আমরাও চাই সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের সেবা অব্যাহত থাকুক। যারা অর্থের অভাবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারে না, তাদের আমরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে উৎসাহী করি। আমরা নিজেরাও সেখানে রোগী পাঠাই। দু-একজনের বিরোধিতাকে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই, বিশেষ করে গরিব রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অর্থ খরচ না করে এখানে এসে বিনা মূল্যে ভালো সেবা নেবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত