Ajker Patrika

পাহাড়ে বইয়ের আলো

শিপ্ত বড়ুয়া, রামু (কক্সবাজার) 
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ৫৫
পাহাড়ে বইয়ের আলো

চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড়। ঘন সবুজ প্রাচীন গাছ। বিদ্যুৎহীন গ্রাম। দুষ্প্রাপ্য বিশুদ্ধ পানি। মানুষ এখনো হেঁটে চলে মাইলের পর মাইল। পাহাড়ের ওপর সেই কঠিন জায়গায় টিনের ছাউনি আর কাঠের তাকে থরে থরে বই সাজিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দুটি সমৃদ্ধ গণপাঠাগার। সেগুলোতে সাজানো আছে গল্প, কবিতা, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভ্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের বই। পাঠকেরা তাঁদের সুবিধামতো সেখানে বসেই পড়তে পারেন পছন্দের বই। আবার চাইলে বাড়িতে নিয়ে গিয়েও পড়তে পারেন। পড়াশোনার বাইরে পাঠাগার প্রাঙ্গণে নিয়মিত আয়োজন করা হয় রচনা প্রতিযোগিতা, সাপ্তাহিক পাঠচক্র এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

কিরণ তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) নামের স্থানীয় এক তরুণ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের মংজয়পাড়া ও বড়ইতলিপাড়ায় গড়ে তুলেছেন পাঠাগার দুটি। ভৌগোলিক পরিসীমায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এগুলোর অবস্থান হলেও কক্সবাজারের মরিচ্যা স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার গেলেই দেখা পাওয়া যাবে পাঠাগার দুটি। একটির নাম মংচিঅং স্মৃতি গণপাঠাগার, অন্যটি মংজয়পাড়া পাঠাগার। দুটি পাঠাগারই সরকারি তালিকাভুক্ত হয়েছে।

শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিক থেকে অবহেলিত নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ এখন রবীন্দ্র-নজরুলের পাশাপাশি ম্যাক্সিম গোর্কি, তলস্তয়সহ বিভিন্ন বিদেশি লেখকের অনুবাদ পড়ছেন। পড়ছেন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা। এসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আনন্দিত এলাকার পাঠকেরা। তেমনি একজন আনন্দিত পাঠক মংচিঅং স্মৃতি গণপাঠাগারের পাশের স্কুল রেজু বড়ইতলি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পুবালি তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি জানান, পাহাড়ের গহিনে থেকেও প্রতিদিন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এখানে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ারও সুযোগ হয়েছে। বইয়ের পাতায় এখন অবসর কাটে তাঁদের।

বড়ইতলি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মংচিঅং স্মৃতি গণপাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক প্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বড়ইতলি ও মংজয়পাড়ায় নানান গোত্রের মানুষ বসবাস করেন। রাখাইন, মারমা, চাকমা, খিসা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষের মানসিক উন্নয়নের জন্য এই পাঠাগার। নানান চড়াই-উতরাই পার করে নিজেদের অর্থে পাঠাগার পরিচালনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। পাঠাগারগুলোকে সমৃদ্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলেও জানান প্রসেন তঞ্চঙ্গ্যা।

সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে ওঠা মংজয়পাড়া গণপাঠাগারের সভাপতি সুচেন তঞ্চঙ্গ্যা কক্সবাজার সিটি কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি জানান, এলাকায় যেহেতু মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, তাই ছেলেমেয়েদের অবসর বিনোদনের একমাত্র উপায় বই পড়া। এখানে কম্পিউটারসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ের বই যুক্ত হলে পাঠক বাড়বে বলে জানান সুচেন।

মংচিঅং স্মৃতি পাঠাগারে বিদ্যুৎসহ কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত হলে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা সংগঠকদের। পাঠাগার দুটির প্রতিষ্ঠাতা কিরণ তঞ্চঙ্গ্যার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া খুব বেশি না থাকলেও পাহাড়ের বুকে পাঠাগার ছড়াতে বদ্ধপরিকর তিনি। কিরণ তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত হতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান জানা খুব জরুরি। এর মাধ্যম বই। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জ্ঞানের চাহিদা মেটাতে আরও পাঠাগার তৈরি খুবই জরুরি।

পাঠাগার দুটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানান, ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া এ দুটি পাঠাগার পরিচালনা করতে গিয়ে অর্থের অভাবে বারবার মুখ থুবড়ে পড়ার অবস্থা হয়েছে। পাহাড়ের বুকে জ্ঞানের আলো ছড়াতে কিরণ তঞ্চঙ্গ্যার এমন উদ্যোগে স্বাবলম্বী ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে সমাজ প্রগতির এই আন্দোলন আরও বেগবান হবে বলে আশা তাঁদের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত