জিন্নাত আরা ঋতু
সালটা ১৮৫৪। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগান প্রতিষ্ঠা করে। উন্নত জীবনযাপনের প্রলোভন দিয়ে এখানে কাজের জন্য কোম্পানিগুলো দালালের মাধ্যমে দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের ওডিশা, মাদ্রাজ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আসে। এসব মানুষের শ্রমে গোড়াপত্তন হয় চা-শিল্পের। যাঁদের হাতে গড়ে ওঠে এই শিল্প, তাঁদের ওপর চালানো হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এমনকি খাবারও জুটত না তাঁদের।
অব্যাহত নির্যাতন ও নিপীড়নে ফুঁসে ওঠেন চা-শ্রমিকেরা। দিনটি ছিল ১৯২১ সালের ২০ মে। ব্রিটিশ শাসকদের বেড়াজাল ভেঙে নিজ দেশে ফিরতে ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চলো) আন্দোলনের ডাক দেন পণ্ডিত গঙ্গা চরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরণ। এ সময় সিলেট থেকে হেঁটে ৩০ হাজারের বেশি চা-শ্রমিক চাঁদপুরের মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। এ ঘাটেই ব্রিটিশ সেনাদের গুলিতে সলিলসমাধি হয় আন্দোলনে শামিল হওয়া শ্রমিকদের। মেঘনা নদীতে ভাসে শত শত চা-শ্রমিকের লাশ।
এ তো গেল গোড়াপত্তনের গল্প। কেটে গেল পুরো একটি শতাব্দী। বর্তমানে চলছে ২০২২ সাল। এই একবিংশ শতাব্দীতে কেমন আছেন চা-শ্রমিকেরা? তাঁরা কি পাচ্ছেন ন্যায্যমূল্য ও অধিকার? নাকি কোম্পানিগুলোর জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন এখনো? চা-শিল্পের উন্নতি হলেও বদলাচ্ছে না তাঁদের জীবন। বর্তমানে একজন চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। নেই নিজস্ব জাতিগত পরিচয়, লেখাপড়ার সুযোগ, স্যানিটেশন, রয়েছে চিকিৎসার অভাব। ৭ ফুট বাই ১৪ ফুট ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর বসবাস তাঁদের। বাগান থেকে রেশন বলতে সপ্তাহে একবার মাথাপিছু ৩ কেজি ৪০০ গ্রাম আটা দেওয়া হয়। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়ে না তাঁদের মজুরি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ১২০ টাকায় একজন চা-শ্রমিকের সংসার চালানো দায়। এই টাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের।
চা-শ্রমিকের মজুরি ঠিক হয় তাঁদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে চা-বাগান রয়েছে ১৬৭টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাগান রয়েছে সিলেট বিভাগে। এসব বাগানে কাজ করছেন ১ লাখ ৩৯ হাজারের মতো শ্রমিক। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে চা-শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। ভারতের আসামে চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ২০৫ রুপি। শ্রীলঙ্কায় মজুরি ১ হাজার রুপি। এ ছাড়া বাসস্থান, চিকিৎসাসহ বাড়তি সুবিধা তো রয়েছেই। সেখানে এ দেশের চা-শ্রমিকেরা অবহেলিত-নিপীড়িত।
নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। যাঁদের শ্রমে-ঘামে এই শিল্পের উন্নয়ন, তাঁরাই আজ বঞ্চিত। তাঁদের কথা শোনার যেন কেউ নেই। ব্রিটিশের পর এল পাকিস্তানি শাসন আমল। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হলেও রয়ে গেছে সেই ব্রিটিশদের গড়ে যাওয়া নিয়মনীতি। চা-বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারেন না তাঁরা। সবকিছুতেই অনুসরণ করতে হয় বাগান কর্তৃপক্ষের নিয়ম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁরা দাসের মতো জীবনযাপন করছেন।
মালিক ও শ্রমিকের সর্বশেষ চুক্তি কার্যকর হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে। মূলত দুই বছর পর পর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তখন মজুরি নির্ধারণ করা হয় চা-বাগানের শ্রেণিভেদে ১১৭, ১১৮ ও ১২০ টাকা। এর আগপর্যন্ত চা-শ্রমিকের দৈনিক নগদ মজুরি ছিল ১০২ টাকা। বর্তমানে ১২০ টাকা মজুরির সঙ্গে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা প্রস্তাব করলে এর বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন চা-শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার। এই দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছিলেন তাঁরা। পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন। তাঁদের এ লড়াই টিকে থাকার।
পিঠে ঝুড়ি নিয়ে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার দৃশ্য যতটা মুগ্ধকর, এর পেছনের কাহিনি ততটাই কষ্টের। অধিক শ্রম, মজুরি কম—এ প্রথা ভেঙে চা-শ্রমিকেরা ফিরে পাক ন্যায্যমূল্য ও অধিকার। ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলন বিফলে গেলেও পূরণ হোক দাবি আদায়।
লেখক: সাংবাদিক
সালটা ১৮৫৪। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগান প্রতিষ্ঠা করে। উন্নত জীবনযাপনের প্রলোভন দিয়ে এখানে কাজের জন্য কোম্পানিগুলো দালালের মাধ্যমে দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের ওডিশা, মাদ্রাজ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আসে। এসব মানুষের শ্রমে গোড়াপত্তন হয় চা-শিল্পের। যাঁদের হাতে গড়ে ওঠে এই শিল্প, তাঁদের ওপর চালানো হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এমনকি খাবারও জুটত না তাঁদের।
অব্যাহত নির্যাতন ও নিপীড়নে ফুঁসে ওঠেন চা-শ্রমিকেরা। দিনটি ছিল ১৯২১ সালের ২০ মে। ব্রিটিশ শাসকদের বেড়াজাল ভেঙে নিজ দেশে ফিরতে ‘মুল্লুকে চল’ (দেশে চলো) আন্দোলনের ডাক দেন পণ্ডিত গঙ্গা চরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরণ। এ সময় সিলেট থেকে হেঁটে ৩০ হাজারের বেশি চা-শ্রমিক চাঁদপুরের মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছান। এ ঘাটেই ব্রিটিশ সেনাদের গুলিতে সলিলসমাধি হয় আন্দোলনে শামিল হওয়া শ্রমিকদের। মেঘনা নদীতে ভাসে শত শত চা-শ্রমিকের লাশ।
এ তো গেল গোড়াপত্তনের গল্প। কেটে গেল পুরো একটি শতাব্দী। বর্তমানে চলছে ২০২২ সাল। এই একবিংশ শতাব্দীতে কেমন আছেন চা-শ্রমিকেরা? তাঁরা কি পাচ্ছেন ন্যায্যমূল্য ও অধিকার? নাকি কোম্পানিগুলোর জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন এখনো? চা-শিল্পের উন্নতি হলেও বদলাচ্ছে না তাঁদের জীবন। বর্তমানে একজন চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা। নেই নিজস্ব জাতিগত পরিচয়, লেখাপড়ার সুযোগ, স্যানিটেশন, রয়েছে চিকিৎসার অভাব। ৭ ফুট বাই ১৪ ফুট ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর বসবাস তাঁদের। বাগান থেকে রেশন বলতে সপ্তাহে একবার মাথাপিছু ৩ কেজি ৪০০ গ্রাম আটা দেওয়া হয়। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়ে না তাঁদের মজুরি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ১২০ টাকায় একজন চা-শ্রমিকের সংসার চালানো দায়। এই টাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ করতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের।
চা-শ্রমিকের মজুরি ঠিক হয় তাঁদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে চা-বাগান রয়েছে ১৬৭টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাগান রয়েছে সিলেট বিভাগে। এসব বাগানে কাজ করছেন ১ লাখ ৩৯ হাজারের মতো শ্রমিক। ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে চা-শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। ভারতের আসামে চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ২০৫ রুপি। শ্রীলঙ্কায় মজুরি ১ হাজার রুপি। এ ছাড়া বাসস্থান, চিকিৎসাসহ বাড়তি সুবিধা তো রয়েছেই। সেখানে এ দেশের চা-শ্রমিকেরা অবহেলিত-নিপীড়িত।
নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। যাঁদের শ্রমে-ঘামে এই শিল্পের উন্নয়ন, তাঁরাই আজ বঞ্চিত। তাঁদের কথা শোনার যেন কেউ নেই। ব্রিটিশের পর এল পাকিস্তানি শাসন আমল। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হলেও রয়ে গেছে সেই ব্রিটিশদের গড়ে যাওয়া নিয়মনীতি। চা-বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছুই করতে পারেন না তাঁরা। সবকিছুতেই অনুসরণ করতে হয় বাগান কর্তৃপক্ষের নিয়ম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁরা দাসের মতো জীবনযাপন করছেন।
মালিক ও শ্রমিকের সর্বশেষ চুক্তি কার্যকর হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে। মূলত দুই বছর পর পর চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তখন মজুরি নির্ধারণ করা হয় চা-বাগানের শ্রেণিভেদে ১১৭, ১১৮ ও ১২০ টাকা। এর আগপর্যন্ত চা-শ্রমিকের দৈনিক নগদ মজুরি ছিল ১০২ টাকা। বর্তমানে ১২০ টাকা মজুরির সঙ্গে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা প্রস্তাব করলে এর বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন চা-শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার। এই দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছিলেন তাঁরা। পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন। তাঁদের এ লড়াই টিকে থাকার।
পিঠে ঝুড়ি নিয়ে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার দৃশ্য যতটা মুগ্ধকর, এর পেছনের কাহিনি ততটাই কষ্টের। অধিক শ্রম, মজুরি কম—এ প্রথা ভেঙে চা-শ্রমিকেরা ফিরে পাক ন্যায্যমূল্য ও অধিকার। ‘মুল্লুকে চল’ আন্দোলন বিফলে গেলেও পূরণ হোক দাবি আদায়।
লেখক: সাংবাদিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪