Ajker Patrika

পাঠক থেকে লেখক

সাজিদ মোহন
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ০৯: ৪৬
পাঠক থেকে লেখক

করোনার করাঘাতের সময় ছাপা পত্রিকার জগতে তৈরি হলো এক টালমাটাল অবস্থা। ছাপা পত্রিকা বন্ধ। কয়েকটি পত্রিকা গোপনে-প্রকাশ্যে শুরু করে কর্মী ছাঁটাই। কেউ কেউ ছেড়ে গেছেন পুরোনো কর্মস্থল। সব মিলিয়ে একধরনের অস্থিরতা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। ছাপা পত্রিকাই যেখানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, ঠিক সে সময় শোনা গেল বাজারে আসছে নতুন একটি পত্রিকা।

প্রতিনিয়তই আমাদের দেশে নতুন নতুন পত্রিকা বাজারে আসে। পুরোনো প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে না পেরে হারিয়ে যায় বেশির ভাগ। ফলে নতুন পত্রিকার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা লড়াইয়ে টিকে যায়।

আজকের পত্রিকার বেলায় ঘটল ব্যতিক্রম। প্রকাশের আগেই একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে আগ্রহ তৈরি হলো দুটি ভিন্ন কারণে। জানতে পারলাম কয়েকজন বিখ্যাত সাংবাদিক যুক্ত আছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। নতুন জায়গায় এসে তাঁরা কীভাবে চমক দেন, সেটা ঘিরে তৈরি হয়েছিল তুমুল আগ্রহ। ফেসবুকের কল্যাণে আরও জানতে পারলাম প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা নতুন এ পত্রিকায় যোগদান করছেন আমারই বন্ধু তালিকায় থাকা কমবেশি ২০ জন লেখক-সাংবাদিক; যাঁদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা আছে। বাকি যাঁদের সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি, কিন্তু তাঁদের লেখা পড়ে, কারও কারও সঙ্গে একই পত্রিকায় লিখে একধরনের না দেখা আত্মীয়তার টান কাজ করতে লাগল।

দীর্ঘমেয়াদি করোনার কারণে পত্রিকাটি আর আলোর মুখ দেখে না। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২১ সালে ২৭ জুন প্রকাশিত হয় দৈনিক আজকের পত্রিকা।

শহর থেকে দূরে আমার নিভৃত গ্রামে আজকের পত্রিকা আসে পাঁচ-ছয় কপি। পত্রিকাটির আমি নিয়মিত গ্রাহক, পাঠক। মানুষ যেমন ভালোবাসার মানুষের ভালো ও খারাপ দিকগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করে, আমিও বের করতে লাগলাম একজন পাঠক হিসেবে পত্রিকাটির শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো। নিজের কাছে নিজেই অভিযোগ করতে লাগলাম, প্রশংসা করতে লাগলাম।

শুরুতেই পত্রিকাটির যে বিষয়টি আকর্ষণ করল সেটা হলো, প্রচুর পরিমাণে খবর। সাধারণত জাতীয় পত্রিকাগুলোতে পৃষ্ঠা কম থাকার কারণে ছোটখাটো অনেক খবরকে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও ময়মনসিংহ—১০টি আলাদা সংস্করণের কারণে আজকের পত্রিকার পাতায় উঠে আসতে লাগল ঘরের পাশের ছোটখাটো খবরও। সেটা অবশ্য পত্রিকার নামের নিচেই লেখা আছে—সারা দেশের স্থানীয় দৈনিক।

ভালো লাগল শেষ পাতায় আমার গ্রাম, মানুষ, উদ্যোগসহ বিভিন্ন শিরোনামে উঠে আসতে থাকা দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যতিক্রম কিছু বিষয়ের ফিচার। ভালো লাগল আষাঢ়ে নয়, আজকের জীবন।

পত্রিকার পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে একদিন দেখলাম, উপসম্পাদকীয় পাতার নিচে লেখা আছে, ছাপানো হবে পাঠকের লেখা। দেরি না করে পাঠিয়ে দিলাম দীর্ঘ একটি লেখা। চার দিন পরেই লেখাটি ছাপা হলো উপসম্পাদকীয় পাতায়।

১২ বছর ধরে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ছোটদের পাতায় গল্প, কবিতা লিখলেও বড় কোনো পত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতায় লেখা ছাপা হওয়া ছিল আমার সামান্য লেখক জীবনের এক অসামান্য ঘটনা। সাড়া মিলল পাঠকেরও।

আনন্দটা চেপে রাখলাম নিজেই নিজের ভেতর। আরও ভালো কিছু যে অপেক্ষা করে আছে সামনে, সেটা কে জানত!

কয়েক দিন পর আজকের পত্রিকা থেকে ফোন করলেন একজন লেখক, সাংবাদিক। বললেন, ‘আপনি আমাদের পত্রিকায় নিয়মিত লিখতে পারেন।’

নির্দিষ্ট ঠিকানায় লেখা পাঠাতে লাগলাম। নিয়মিত লেখা ছাপা হতে লাগল উপসম্পাদকীয় পাতায় ‘কয়েক ছত্র’ কলামে। গল্প, কবিতার মানুষ আমি আজকের পত্রিকার কল্যাণে এ পর্যন্ত লিখে ফেললাম ২০টির বেশি কলাম।

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল এক বছর। ইতিমধ্যে পত্রিকাটি পাঠকের ব্যাপক ভালোবাসা পেয়েছে। এক বছরেই উঠে এসেছে প্রচারসংখ্যায় ৩ নম্বরে। পত্রিকাটির আরও অনেক অর্জনের মহাসাগরে একজন পাঠকের লেখক হয়ে ওঠার গল্পটি মিশে থাকুক একবিন্দু জল হয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত