Ajker Patrika

শিরোনাম শিরোমণি

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ২৯
শিরোনাম শিরোমণি

নিখুঁত শিরোনাম দিতে পারতেন সিরাজুদ্দীন হোসেন। ইত্তেফাক পত্রিকার জনপ্রিয়তার একটা বড় কারণ ছিল প্রতিবেদনের অব্যর্থ শিরোনাম। ‘সুকুইজ্জ্যা কডে’, ‘চিনিল কেমনে?’ ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’ ধরনের শিরোনামগুলো তাঁর কীর্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।

মুসলিম লীগের শাসনামলে রূপমহল সিনেমা হলে ক্ষমতাসীন দলের সভা হচ্ছিল। দলে তখন গ্রুপিং। দলাদলি পৌঁছে গেছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। মন্ত্রী, বড় বড় নেতার সামনেই বিভিন্ন উপদলের মধ্যে শুরু হয়ে গেল মারপিট। হট্টগোল এমন জায়গায় পৌঁছাল যে পুলিশ বাধ্য হয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করল।

ইত্তেফাক থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন প্রতিবেদক শামস উল হুদা। তিনি ফিরে এসে বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ঘটনা বললেন। কীভাবে প্রতিবেদনটি লিখতে হবে, সেই নির্দেশনা দিলেন সিরাজ। আট কলামে ব্যানার হেডিং হবে, এ রকমই ভাবছিলেন বার্তা সম্পাদক। কিন্তু সন্ধ্যার পর তথ্য দপ্তর থেকে এল নির্দেশ—সরকারি দলের সভায় পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে, এ কথা লেখা যাবে না।

পুলিশের লাঠিচার্জের কথাই যদি না ছাপা যায়, তাহলে এ খবরের কোনো মানেই তো হয় না। শামস উল হুদা নিরাশ হয়ে বললেন, ‘তাহলে কী করব সিরাজ ভাই?’

সিরাজুদ্দীন হোসেন হেসে বললেন, ‘ওদের কাজ ওরা করেছে, আমরা আমাদের কাজ করব।’

পরদিন ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় আট কলামে ছাপা হলো খবরটি এভাবে, ‘সরকারি দল মুসলিম লীগের সভা, পুলিশের লাঠিচার্জ হয় নাই, আহত ২৫ জন’।

এরপর আর কিছু কি বোঝার বাকি থাকল পাঠকের?

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী আর আলবদররা যখন চামেলীবাগের ভাড়া বাড়ি থেকে সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তখন তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গি আর গেঞ্জি। ভয়াবহ শীতের সে রাতে চোখে গামছা বেঁধে তাঁকে নিয়ে ওঠানো হয় কাদালেপা মাইক্রোবাসে। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।

সূত্র: সিরাজুদ্দীন হোসেন ও সমকালীন সাংবাদিকতা, পৃষ্ঠা ৩৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত