Ajker Patrika

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ছিল তাঁর নেশা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ১৪
প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ছিল তাঁর নেশা

নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যা করা মুন্নার নেশায় পরিণত হয়েছিল। এ পর্যন্ত দুজন নারীকে তিনি ধর্ষণের পর হত্যা করেছে। এই দুই নারী খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা। পিবিআই কর্মকর্তাদের ধারণা মুন্নাকে নিয়ে তদন্ত করলে আরও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যাবে।

গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পান্না আক্তারের হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলে আমরা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করি। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেসকোর্স এলাকা থেকে সিরিয়াল কিলার মুন্নাকে গ্রেপ্তার করি। তাঁর দেওয়া তথ্যে একই দিন রাতে তাঁর সহযোগী দ্বীনুকে গ্রেপ্তার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এরপর আমরা মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমার মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পাই। লাইলীর পরিবার তাঁর নিখোঁজের ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা করেছিল আদালতে। সেটি আমরা তদন্ত করছি। আর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ফেনী সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা করেছে পুলিশ। এরপর কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না দুটি হত্যাকাণ্ডের কথাই স্বীকার করেছেন। গত সোমবার বিকেলে তাঁরা দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছেন, ওই নারীদের সঙ্গে প্রথমে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন তিনি। এরপর তাঁদের বিয়ের প্রলোভনে ডেকে এনে প্রথম ধর্ষণ ও পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করতেন। মাইক্রোবাসে করে পান্নার লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার গোপীনাথপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। আর লাইলীর লাশ ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।

এসপি বলেন, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ধর্ষণ এবং পরে হত্যা তাঁর নেশায় পরিণত হয়ছিল। তিনি একজন সিরিয়াল কিলার। এ দুজন ছাড়া আর কাউকে এভাবে হত্যা করেছে কিনা আমরা তা যাচাই করে দেখছি। তার সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন নারীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা ছিল মুন্নার পরবর্তী টার্গেট।

পিবিআইয়ের সদস্যরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলায় মুন্নাকে গ্রেপ্তারের পর অপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য পায় তাঁর কাছ থেকে। মুন্নার সহযোগী দ্বীন ইসলাম দ্বীনু (১৯) মাইক্রোবাসচালক। তাঁর গাড়িতে করেই ওই নারীদের লাশ ফেলা হয়েছে। তাঁকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। দ্বীনু কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীরা হলেন, জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার (২৮) এবং কুমিল্লা সদরের আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা (২৬)। দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর। আর এক সন্তানের জননী লাইলীকে হত্যা করা হয়েছে গত ২ সেপ্টেম্বর।

আবদুল্লাহ আনসারী মুন্নার (২৩) বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা গ্রামে। প্রায় ২০ বছর আগে তাঁর মা ঝর্ণা বেগম মারা যান। বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই। তাই ছোটবেলা থেকেই মুন্না কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন মানুষের আশ্রয়ে বড় হয়েছেন। কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় একটি ফাস্ট ফুড দোকানের কর্মচারী তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত