Ajker Patrika

রাস্তার কাজ অর্ধেক, দুর্ভোগ পুরো

ফয়সাল পারভেজ, মাগুরা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৬: ৩৪
রাস্তার কাজ অর্ধেক, দুর্ভোগ পুরো

‘বাড়ির সামনের রাস্তাটা ভালোই ছিল। মাটির রাস্তা হলিও শক্ত ছিল। বৃষ্টিতে কাদা হতো না। আর এখন মাটি ফেলেছে দেহেন কিরাম। উঁচু ঢিবি হয়ে গেছে। সমান করে যায় নাই। ইউনিয়ন পরিষদ বলে টাকা শেষ তাই আর কাজ হবি না। এখন রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। এরাম কাজ করার মানে কি বুঝলাম না।’

কথাগুলো বলছিলেন মাগুরা সদরের আঠারখাদা ইউনিয়নের আলীধানী গ্রামের নবগঙ্গা মধ্যপাড়ার পান্নু মোল্লা মিয়া। রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় এভাবেই দুর্ভোগের কথা জানান তিনি।

পান্নু মোল্লা আরও বলেন, ‘এক মাস ধরে এমন ভোগান্তি পোহাচ্ছি। জিনিসপত্র নিয়ে মাঠের কাজে যেতে কষ্ট হয়। কেউ দেখার নেই।’

ইউনিয়ন পরিষদে কর্মসংস্থান কর্মসূচির ৪০ দিনের কাজের টাকা অর্ধেক সময়ে ফেরত যাওয়ায় মাগুরা জেলা সদরের কয়েকটি ইউনিয়নে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ অর্থ বছরের প্রকল্পের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেরিতে ছাড় পাওয়ার কারণে সময় মতো কাজ শেষ হয়নি। দেশের অধিকাংশ ইউনিয়নে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন মাগুরার কয়েকটি প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, এমন অর্ধেক কাজ হওয়ায় সাধারণ মানুষেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলা সদরের আঠারখাদা ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার কৃষক নসিম বলেন, ‘সামনে পাটের সময়। তাহলে এ রকম উল্টো পাল্টা কাজ করার দরকার কি। অর্ধেক মাটি ফেলে আমার বাড়ির সামনে উঁচু ঢিবি বানাই রাখছে। বৃষ্টির পানি গড়ায় বাড়ির ভেতরে যায়। মাটি কোনোরকম ফেলে তাঁরা চলে গেছে। এখন বিপদে পড়েছি আমরা।’

একই ইউনিয়নের আনসার ভিডিপি ক্লাব সংলগ্ন মাটির রাস্তাটিও এক পাশে উঁচু তো অন্য পাশে নিচু। কদিন বৃষ্টিতে হাঁটু কাদা হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, বেলে মাটির রাস্তাটি ভালো ছিল। কিন্তু এখন মাটি ফেলেছে একপাশে, সমান করেনি। এতে ৫০টি পরিবার দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাঁটু কাদার মধ্য দিয়ে দিয়ে বাচ্চারা স্কুলে যায়। তাঁদের স্কুলের ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়।

সদরের ১৩টি ইউনিয়নেই এমন কম বেশি খারাপ পরিস্থিতি। আগের বছরগুলোতে নারী কর্মী দিয়ে কাজ করা গেলেও এবার অর্ধেক কাজ হয়েছে দায়সারাভাবে। এই কর্মসূচির নিয়মিত এক নারী শ্রমিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তাড়াহুড়ো করে কাজ করানো হয়েছে এ বছর। কোথাও দুই দিন, কোথাও বা একদিন মাটি ভরাট করার কাজ করতে পেরেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, ‘এলাকার রাস্তার পাশে মাটি ভরাট কাজ পুরো সম্পন্ন হয়নি। ৩০-৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে পুরো কাজ শেষ হওয়া দরকার। গত অর্থ বছরের ২০ দিনের কাজ শেষে হয়েছে। এরপর আর বরাদ্দ আমরা পাইনি। বর্ষা মৌসুমে এই কাজগুলো শেষ হলে ভালো হয়। না হলে রাস্তার দুপাশে মাটি ভরাট পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে।’

জগদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চল্লিশ দিনের কাজ আসে বছরে দুই বার। এবার শুনেছি অর্থবরাদ্দ বিশ দিনের হয়ে আর আসেনি। এ জন্য বিশ দিনের কাজ করা হয়েছে। তবে কাজ সমাপ্ত হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে। আশা করছি জটিলতা অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।’

সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান জানান, যতটুকু বরাদ্দ ততটুকু কাজ হয়েছে। ৪০ দিনের কাজ ২০ দিনে হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্য ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পুরো কাজ শেষ করতে বরাদ্দের প্রয়োজন।

মাগুরা সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা আম্বিয়া বেগম শিল্পী জানান, মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পাওয়া গেছে অর্ধেক কাজের। ফলে বাকি ২০ দিনের কাজের টাকা না আসায় পরিষদের এই কাজগুলো আর আগায় নি। তবে এই অর্থবছরে আর টাকা বরাদ্দ হবে না। ২০২৩ অর্থ বছরে কাজ শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত