Ajker Patrika

থামছে না পদ্মার ভাঙন

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১২: ২২
থামছে না পদ্মার ভাঙন

রাজবাড়ীতে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা তীর সংরক্ষণ কাজের ব্লকের ধস থামছে না। গত তিন মাসে কয়েক দফা ভাঙনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এরই মধ্যে পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সদর উপজেলার গোদারবাজার এলাকার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আবারও ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হয় ১০০ মিটার এলাকার সিসি ব্লকসহ বেশ কয়েকটি গাছপালা। ভাঙন আতঙ্কে নদীর তীরবর্তী মানুষ বাড়িঘর নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। হুমকির মুখে রয়েছে শহররক্ষা বেড়িবাঁধও।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। চোখের পলকে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে বড় বড় নারকেল ও মেহগনিগাছ, বাঁশ-ঝোপসহ নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের সিসি ব্লক। ভাঙন এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই তাঁদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিতে নিচ্ছেন। ভাঙন-ঝুঁকিতে রয়েছে ওই এলাকার অন্তত ২০টি বাড়িঘর। ঘরবাড়ি হারানো মানুষের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে আশপাশ। এ ছাড়া ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘পদ্মার অবস্থা ভালো না। সে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। চোখের পলকে গাছপালা নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে, এখন বেলা ১টা। এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেনি। যেভাবে ভাঙছে শহর রক্ষা বাঁধ তাতে না থাকার সম্ভাবনা শত ভাগ।’

মোখলেস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আজ আমাদের বাড়িঘর নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। আমরা ভিটেহারা হয়ে পড়ছি। অথচ ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

কুলসুম বেগম বলেন, ‘জায়গা-জমি তো অনেক আগেই নদীর পেটে। বাকি ছিল বাড়িটুকু। সেটাও যেকোনো সময় চলে যাবে। মিস্ত্রি ডেকে এনে ঘর ভেঙে ফেলছি। ঘরের আসবাব ভ্যানে করে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। নিজের বলতে আর কিছুই রইল না।’

জানা যায়, পদ্মা নদীর ভাঙনরোধে রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর ডান তীর বাঁধাইয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট। যেটি দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মোট ছয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে ভিন্ন ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজের দায়িত্ব পায়। সবচেয়ে বড় সাড়ে ৪ কিলোমিটার প্যাকেজের কাজটির দায়িত্ব পায় খুলনা শিপইয়ার্ড। তাদের কাছ থেকে সাব–কন্ট্রাক্ট নিয়ে কাজটি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল)। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রোগ্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী ছয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটিই কাজ শুরু করে ২০১৯ সালের ৮ জুলাই। কাজ শেষ দেখানো হয়েছে চলতি বছরের ৩১ মে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এখনো কাজ বুঝে নেয়নি। গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হয় ভাঙন। এ পর্যন্ত ১৫ দফা ভাঙনে ১ হাজার মিটারেরও বেশি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, খবর পেয়ে গতকাল বেলা দেড়টা থেকে তাঁরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। সম্প্রতি যেসব জায়গায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় তাঁরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করছেন। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্যই ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত