Ajker Patrika

সন্দেহভাজন কয়েকজন বুকিং সহকারী ছুটিতে

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৫
সন্দেহভাজন কয়েকজন বুকিং সহকারী ছুটিতে

রাজশাহীতে ট্রেনের টিকিট চোখের পলকেই শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কয়েক দিন ধরেই আলোচনায়। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী স্টেশন ঘিরে থাকা কালোবাজারি চক্রের অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে টিকিট। আর এ চক্রে রাজশাহী রেলস্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মমিনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

টানা কয়েক দিন অনুসন্ধান চালিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ চক্রের পেছনে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন মমিন ছাড়া আরও গুটিকয়েক অসৎ বুকিং সহকারী। এ চক্রকে ধরতে সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনকে তাগাদা দেওয়া হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সন্দেহভাজন কয়েকজন বুকিং সহকারী গা-বাঁচাতে ছুটি নিয়েছেন। ছুটিতে গেছেন প্রধান বুকিং সহকারীও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী রেলস্টেশনের কাউন্টারের দায়িত্বে আছেন ২৬ জন বুকিং সহকারী। এর মধ্যে প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মমিনসহ পাঁচজন এখন ছুটিতে। মমিন এই স্টেশনে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে অনিয়মের অভিযোগের কারণে তাঁকে রাজশাহী স্টেশনের বাইরে বদলি করা হলেও ছয় মাসের ব্যবধানে আবারও রাজশাহী স্টেশনে ফিরে আসেন। তিনি তাঁর দুজন সহযোগী বুকিং সহকারীকে নিয়ে টিকিট কালোবাজারি নেটওয়ার্ক গুছিয়ে রেখেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মমিন ছুটিতে যাওয়ার আগে স্টেশনে দেখা গেছে, তিনি সাধারণত ৬ নম্বর কাউন্টারে থাকেন। এই কাউন্টারে টিকিট নিতে যাওয়া অনেককেই মমিনের কাছে গিয়ে ‘অমুক ভাই’ পাঠিয়েছেন বলতে দেখা গেছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই মমিন বের করে দিয়েছেন টিকিট। তবে একই সময় লাইনে দাঁড়ানো অন্যদের টিকিট নেই বলে ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে। মমিন সারা দিন স্টেশনে না এলেও রোজ রাত আটটা থেকে এই কাউন্টারে থাকেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান বুকিং সহকারী আবদুল মমিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস দেওয়ার পরও তিনি ফোন ধরেননি। তাই অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রেনের ধারণক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াতের নির্দেশনা দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিট নিয়ে সংকট বহুদিনের হলেও রেল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের পর তা প্রকট আকার ধারণ করে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে টিকিট কালোবাজারি চক্র। ট্রেনের টিকিট যাত্রার ৫ দিন আগে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। নির্ধারিত মোট আসনের ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর অল্প সময়ের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকামুখী চারটি ট্রেনের ক্ষেত্রে টিকিট সংকট প্রকট। অনলাইনে টিকিট নিতে যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রয়োজন পড়ে। আর কালোবাজারি চক্র নানাভাবে অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইন থেকে টিকিট নামিয়ে নিচ্ছে। আর ট্রেনে টিকিট যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এই চক্র।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে টিকিট কালোবাজারিতে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে রাজশাহী নগরীর কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান, বিমানের টিকিট বিক্রির দোকানসহ শিরোইল, মঠপুকুর, শিরোইল কলোনি ও দড়িখরবোনা এলাকার কয়েকজন যুবক জড়িত। তাঁরা অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি রাজশাহী স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারীসহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় দিব্যি চাহিদামতো টিকিট পেয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-রাজশাহী রুটে চারটি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। এই ট্রেনগুলোতে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪০ থেকে ৩৭৫ টাকা, স্নিগ্ধা চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ থেকে ৭২৫ টাকা। তবে কাউন্টার থেকে বুকিং সহকারীর মাধ্যমে দালালদের হাতে পৌঁছে তা হয়ে যায় যথাক্রমে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, আর ৭৮২ থেকে ৮৬৫ টাকার কেবিনের ভাড়া হয়ে যায় ১ হাজার টাকা। বিশেষ দিন বা ঢাকায় সরকারি চাকরির পরীক্ষার তারিখ থাকলে কালোবাজারে এই টিকিটের দাম আরও বেড়ে যায়।

সম্প্রতি রাজশাহী স্টেশনে টিকিট সংকট নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশিত হওয়ার পর কালোবাজারি রোধে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নগর আওয়ামী লীগের নেতারা উদ্যোগী হয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), নগর পুলিশের কমিশনার ও র‍্যাব-৫ এর পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন দেন। পশ্চিম রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার রেলের টিকিট কালোবাজারি রোধে তৎপরতা শুরু করেছন। তিনি নিজেও ঢু মারছেন স্টেশনে। এ অবস্থায় ছুটিতে চলে গেছেন সন্দেহভাজন বুকিং সহকারীরা।

পশ্চিম রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার বলেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি নির্দেশনামতো নির্ধারিত আসনের চেয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। টিকিট কালোবাজারি রোধে রেল কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে। এই কাজে রেলের কেউ জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পশ্চিম রেলের শীর্ষ এই কর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ছাত্রদল কর্মী ইপ্সিতার, ধর্ষণের অভিযোগ আসে ৯৯৯ থেকে

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

নূরুল হুদাকে হেনস্তা: বিচারের দাবিতে ৩৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতি

মার্কিন ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হামলার আগে কাতারকে জানায় ইরান: সিএনএন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত