Ajker Patrika

নবরূপে শারদীয়া

আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ০৩
নবরূপে শারদীয়া

ধূপের গন্ধ নাকে লাগল বলে। বাতাসে এখন পুজোর আগমনী সুর। আর শারদীয় দুর্গাপূজা মানেই সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির ঘরে ঘরে আনন্দগান বেজে ওঠা। আটপৌরে কাপড় ছেড়ে আনকোরা নতুন কাপড় গায়ে জড়ানোর পরিকল্পনা এখন থেকেই চলছে ঘরের মা, মেয়ে আর বউদের মধ্য়ে। সুতি নাকি তসর? সিল্ক না মসলিন, কে কেমন পুজোর শাড়ি কিনবেন, এ নিয়েই চিন্তা চলছে। একটু-আধটু শপিং মলে ঢুঁ দিতেও শুরু করেছেন তাঁরা। চোখ বন্ধ করে পুজোর সাজের কথা ভাবলে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি আর সোনা-রুপার অলংকারে সজ্জিত নারীর ছবিই ভেসে ওঠে। তবে যুগের পালাবদলে পুজোর শাড়ি আর গয়নায় যোগ হয়েছে আরও অনেক রং, অনেক উপাদান।

পুজোর শাড়িতে নবযোগ
দেশীয় ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড আড়ংয়ের সিনিয়র ডিজাইনার আন্তু নাজনীন বলেন, ‘পুজো বলতে আমরা একমনে সিঁদুর লাল ও সাদাকে বুঝি। এটা ট্র্যাডিশনাল কালার। আগে এই দুটো রংই চলত। এখন সেই ধরাবাঁধা ছক আর নেই। কারণ, একটা কাপড় কেনার পর সেটা কেবল উৎসবেই তো আর পরা হয় না, পরে বিভিন্ন সময়েও তা পরা যায়। আর এখন মানুষ অনেক রং নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন। এবার পুজোয় একটু মেরুন, ম্যাজেন্টা, গেরুয়া, হলুদ নিয়ে কাজ করছি আমরা। আবার একেবারেই শুভ্র রং, সেটা তো থাকছেই।’

তিনি আরও জানান, পুজোর শাড়িতে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে শঙ্খ, পদ্ম ও দেবীমুখ। তারপর পুজো যেহেতু একেবারেই বাঙালি ঘরানার উৎসব, সেহেতু বাংলার চিরাচরিত যে মোটিফ-ফুল, পাতা, কলকা, সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরে একটু ট্রেন্ডিধাঁচের শাড়িগুলোয় জিওমেট্রিক মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে এবার।

আড়ংয়ে কটনের পাশাপাশি সিল্ক, মসলিন, এন্ডি শাড়িতে স্ক্রিনপ্রিন্ট, নকশিকাঁথার কাজ, ব্লকসহ মোটামুটি সব ধরনের মিডিয়াতেই কাজ করা হয়েছে। আর এগুলোর দামও বিভিন্ন রেঞ্জে রাখা হয়েছে, যাতে সব ধরনের ক্রেতাই তাঁদের রুচি অনুযায়ী কিনতে পারেন। যোগ করেন তিনি।

রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ‘‘রঙ বাংলাদেশের পুজো ঘিরে আলাদা একটা আয়োজন থাকেই। আমরা সব সময় থিমভিত্তিক কাজ করি। এবারের পুজোয় আমাদের থিম আছে মূলত তিনটি। ‘মন্দির ও প্রতীক’, ‘দেবীর অলংকার’ ও ‘শতরঞ্জি’ এই তিনটি থিম দিয়ে এবার আমরা আমাদের পোশাকগুলো তৈরি করেছি।’’

তিনি আরও বলেন, ‘মূলত সুতি কাপড়ের ওপরেই আমরা কাজ করেছি। হাফসিল্কেরও প্রচুর শাড়ি করা হয়েছে। এক্সক্লুসিভ শাড়ির ক্ষেত্রে এন্ডি আর মসলিনও অল্প পরিমাণে রাখা আছে।’

ফ্যাশন হাউসগুলো ছাড়াও ফেসবুক ফ্যাশন পেজগুলোয়ও পাওয়া যাচ্ছে পুজোকে কেন্দ্র করে তৈরি করা শাড়ি। নান্দীপাঠ পেজের স্বত্বাধিকারী তীর্থ নান্দী খায়ের বলেন, ‘পুজোর জন্য খাদি শাড়ির ওপর আমরা এমব্রয়ডারি করেছি। এটা একেবারেই নতুন উদ্ভাবন। এ ছাড়া এন্ডি কটনের ওপর ব্লকের শাড়ি আছে।’

অঞ্জলি, দাওয়াত আর বেড়ানোর শাড়ি
আন্তু নাজনীন বলেন, ‘এখন তো বেশ গরমই বলা চলে। যেহেতু দিনের বেলায় বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপার রয়েছে, সে ক্ষেত্রে সাদা বা হালকা রঙের সুতির শাড়িই আরামদায়ক হবে। আবার সন্ধ্যায় বের হওয়ার থাকলে বা দাওয়াত থাকলে, একটু জমকালো, উজ্জ্বল শাড়ি পরলে ভালো লাগবে। সে ক্ষেত্রে সিল্ক, মসলিন শাড়িগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে, যেগুলোয় একটু সিকোয়েন্সের কাজ থাকবে। সে ক্ষেত্রে শাড়ির রংটাও গাঢ় হলে ভালো দেখাবে।’

সৌমিক দাস যোগ করেন, সকাল বেলাটায় পুজো-অর্চনার বিষয় থাকে, তাই সে সময়টা সাদা-লাল সুতির শাড়ি পরলে ভালো। এককথায় ক্যাজুয়াল। আর রাতের দাওয়াত, পুজোমণ্ডপে ঘোরার সময়টায় এক্সক্লুসিভ বা গর্জিয়াস শাড়িগুলো সবাই পরতে ভালোবাসেন।

পুজোর গয়নাগাটি
পুজোয় ভারী গয়না খুব বাধ্য হয়ে কখনো পরতে হলেও এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধারা থেকেও অনেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধারায় গা ভাসিয়েছেন। এখন সোনা বা রুপার পাশাপাশি কানে, গলায়, হাতে শোভা পায় পিতল, কাঠ, কাপড় ও অ্যান্টিকের গয়না।

ফেসবুক পেজ টেনটেরালীর স্বত্বাধিকারী পৃথ্বিষা বৈদ্য বলেন, “পুজোর গয়নার জন্য ‘দেবীপক্ষ’ নামে একটা সেগমেন্টই রেখেছি। এখন তো মানুষ উৎসব অনুযায়ী ভিন্ন ঘরানার গয়না পরতে ভালোবাসে, সে কথা মাথায় রেখেই গয়না তৈরির কাজ চলছে।

অন্যবার কাঠের ওপর হ্যান্ডপেইন্ট করতাম। এবার কাপড়ের ওপর হ্যান্ডপেইন্ট করে গয়না বানাচ্ছি। এ ছাড়া পিতলের কিছু গয়না আমরা তৈরি করছি পুজোর জন্য। এখানে পিতল দিয়ে ত্রিশূল, স্বস্তিকা এবং ওম–এই ত্রিশক্তি দিয়ে গয়না বানানোর কাজ চলছে। এই গয়নাগুলো অনলাইনে অর্ডার ছাড়াও ঢাকার বনানীতে যাত্রার শোরুমে একটা কর্নারে কিনতে পাওয়া যাবে।”

ত্রিনিতির অন্বেষা দত্ত বলেন, ‘মূলত কাঠের গয়না নিয়েই কাজ করি। কিন্তু এবার ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে আমরা মাটি ও টেরাকোটাভিত্তিক কাজই বেশি করেছি। গলায় পরার জন্য এই গয়নাগুলোয় দশভুজার স্পষ্ট একটা রূপ দেখা যায়। এবার পুজোর কালেকশনে নকশার ওপর ভিত্তি করে মাটি ও টেরাকোটার গয়নাগুলোর দাম সর্বোচ্চ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। ফেসবুক পেজের মাধ্য়মেই গয়নাগুলো কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।’

এ ছাড়া ঢাকার নিউমার্কেট, মৌচাক, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের গয়নার দোকান ছাড়াও সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি, বৃত্ত, ব্লুম অ্যাটেয়ার বাই মৌমি নামের গয়নার ফেসবুক পেজে পাওয়া যাবে চলতি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পুজোর গয়না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত