Ajker Patrika

সামনে নেই দর্শক-শ্রোতা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩৯
সামনে নেই দর্শক-শ্রোতা

দর্শক-শ্রোতার সামনাসামনি গান গাইলে তাকাতে হয় তাদের দিকে। রেডিওতে গান করলে তাকানোর বিষয়টি খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়; কারণ শ্রোতা দেখতে পাচ্ছে না শিল্পীকে। কিন্তু ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর যখন ঢাকায় এল টেলিভিশন এবং সেই টেলিভিশনে সরাসরি গাইতে হলো গান, তখন কী অবস্থা হয়েছিল ফেরদৌসী রহমানের?

সন্ধ্যা সাতটায় ছিল গানের অনুষ্ঠান। ফেরদৌসী রহমান প্রথম গাইলেন আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা ও আনোয়ারউদ্দীন খানের সুর করা ‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ/সে শুধু তোমার প্রেমে...’ গানটি। এরপর গাইলেন একটা ভাওয়াইয়া গান।

এত দিন বেতারে গেয়েছেন ফেরদৌসী রহমান, সেখানে দর্শক নেই। তাই কপাল কোঁচকালে কিংবা যন্ত্রীদের ইশারা করলে কেউ দেখতে পাবে না। শ্রোতাদেরও দেখা যায় না। স্টেজে গাওয়ার সময় সরাসরি দর্শক-শ্রোতাদের দেখে বোঝা যায়, গানটি তাদের পছন্দ হচ্ছে কি না। এবার এই নতুন যন্ত্রে যন্ত্রণাটাও নতুন! সামনে দর্শক-শ্রোতা নেই, কিন্তু সব সময় মনে রাখতে হচ্ছে সামনেই আছে দর্শক, সামনেই আছে শ্রোতা!

কীভাবে তাহলে মানিয়ে নিলেন ফেরদৌসী রহমান?

গান করার সময় হাতের ডান দিকে দূরে ছিল একটি টেলিভিশন মনিটর। সেটাতে ফেরদৌসী নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলেন। সেদিকে মাঝে মাঝে দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল তাঁর, কিন্তু মূলত চোখ রেখেছিলেন ক্যামেরার দিকে। ক্যামেরাই তো দর্শক, ক্যামেরাই শ্রোতা।

সে সময় যে কথাটা মনে আসেনি, পরে তা তাঁকে আনন্দ দিয়েছে খুব। তিনিই যে টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্রের প্রথম সংগীতশিল্পী, তা তো এখন ইতিহাস। এই প্রথম আর কেউ তো হতে পারবে না। বহু দেশের বহু টিভি স্টেশনে গান করেছেন ফেরদৌসী। এর মধ্যে আছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ। কিন্তু ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বরের সেই সরাসরি টিভি অনুষ্ঠানটিই তাঁর মনে সবচেয়ে গাঢ় হয়ে আছে। এর কোনো তুলনা হয় না।

সূত্র: ফেরদৌসী রহমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর, পৃষ্ঠা ৮২-৮৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত