Ajker Patrika

একটি গাছই আড়াল করে রেখেছে পুরো গ্রাম

শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০৯
একটি গাছই আড়াল করে রেখেছে পুরো গ্রাম

দূর থেকে দেখলে মনে হবে, অনেকগুলো গাছ মিলে যেন একটি দেয়াল তৈরি করেছে। কিন্তু যত কাছে যাওয়া যায়, ততই বিষয়টি স্পষ্ট হতে থাকে। অনেকগুলো নয়, একটি গাছই বিস্তৃত হয়ে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে, আগলে রেখেছে একটি গ্রামকে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রামে গেলে এই গাছের দেখা মেলে। পাতাগুলো অনেকটা হিজলগাছের মতো হলেও স্থানীয়রা একে চণ্ডীগাছ নামে ডাকেন। অনেকে করসগাছ নামেও চেনেন। কিশোরগঞ্জের হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের যেন এই গাছের ছায়ার পরশ একবারের জন্য হলেও চাই চাই-ই। শুকনো মৌসুমে তো পর্যটকের আনাগোনা থাকেই, বর্ষাও নৌকা নিয়ে অনেকে আসেন গাছটি দেখতে।

নাম যা-ই হোক না কেন, গাছটি কাকুরিয়া গ্রামের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে অটল থাকে বিশাল আকৃতির গাছটি। গুচ্ছ গাছটির উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মূল গাছের শিকড় থেকে তৈরি হয়েছে আরও ৩০-৪০টি শাখা। মাটিতে ডালপালা লেগে বেড়েছে গাছের বিস্তৃতি। গাছের ভেতরে রয়েছে অনেক ফাঁকা স্থান। ছায়া-সুনিবিড় সেসব জায়গা। রোদ-বৃষ্টি, সর্বাবস্থায় যেন নিরাপদ আশ্রয়স্থল এই গাছ। ক্লান্ত কৃষক কিংবা পথিকের বিশ্রামের জায়গা। আবার অনেক পাখির আবাসও এই গাছ।

কাকুরিয়া গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে হাওরবেষ্টিত এ গ্রামের চারদিকে পানি থইথই করে। তৈরি হয় বড় ঢেউ। এ সময় পানিবন্দী গ্রামকে ঢেউ থেকে রক্ষা করে এই গুচ্ছ গাছটি। গাছের গোড়া তখন পানিতে ডুবে থাকে ৫-৬ ফুট। গাছটির মূল কাণ্ড ঘিরে তৈরি করেছে একটি দেয়াল। এ ছাড়া ২০০৫ সালে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে একটি পূজামণ্ডপ তৈরি করেন। মূল গাছের নিচে প্রতিবছর কার্তিক মাসে রাসপূর্ণিমা তিথিতে তিন দিনব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন উৎসব ও মেলা বসে। উৎসবে হাজারো ভক্ত ভিড় জমান।

তবে যে গাছ ঘিরে এত কথা, যে গাছ এভাবে পুরো একটি গ্রামকে আগলে রেখেছে, তার বয়স কেউ বলতে পারেন না। কাকুরিয়া গ্রামের একজন বৃদ্ধ বলেন, ‘বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি, একটি গাছ থেকে ডালাপালা বেড়ে অনেক শাখা হয়েছে। গাছটির কখন জন্ম, আমরা তা জানি না। বাপ-দাদারাও গাছটি জন্মের কথা বলতে পারেননি।’

নরসিংদী থেকে কিশোরগঞ্জের হাওরে ঘুরতে এসেছিলেন নরসিংদীর শামসুল আলম। অন্যান্য পর্যটকের মতো তিনিও বিশালাকৃতির চণ্ডীগাছ দেখতে এসেছিলেন। শামসুল আলম বলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অল ওয়েদার সড়কে ঘুরতে এসেছিলাম। স্থানীয় অটোরিকশার চালকের কাছে গাছটির কথা শুনে কৌতূহলবশে দেখতে এলাম। এত বড় গাছ আমি কখনো দেখিনি। এককথায় মনোমুগ্ধকর।’

কিশোরগঞ্জ বন বিভাগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ফরেস্ট রেঞ্জার মো. হরুনুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, স্থানীয়রা বিশালাকৃতির ওই গাছটিকে চণ্ডীগাছ বলে। তবে চণ্ডীগাছ বলে কোনো গাছ নেই। এটি হিজল প্রকৃতির গাছ হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ভোলায় শ্রমিক দল নেতাকে হত্যার চেষ্টা, ছাত্রদল-যুবদলের ৫ জনের নামে মামলা

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত