Ajker Patrika

চাঁইয়ের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ জুন ২০২২, ১২: ৩৪
চাঁইয়ের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়

নাটোরের গুরুদাসপুরে জমে উঠেছে চাঁইয়ের হাট। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরায় ব্যবহার হয় এই ফাঁদ। উপজেলার পৌর সদরের চাঁচকৈড় হাটে বসে চাঁইয়ের বড় মোকাম। সপ্তাহের দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার এই হাট বসে। এই উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহর থেকে চাঁই বিক্রি করতে আসেন অনেকে। চলনবিল এলাকা ছাড়াও ঢাকা, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এলাকার পাইকার ও জেলেরা এসে চাঁই কিনে নিয়ে যান।

জানা গেছে, চলনবিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ ধরার কাজে ব্যবহার হয় চাঁই। আর এটি বুনে বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন কারিগরেরা। এই আয় থেকেই উপজেলার প্রায় ৬ হাজার পরিবারের অভাব দূর হচ্ছে।

চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সবাই কমবেশি দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। জমিজমা নেই। বছরের একটা সময় হাতে কাজ থাকে না তাঁদের। বিকল্প আয় হিসেবে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির আয় থেকে সংসার চলে। এ ছাড়া এই কাজে পুঁজিও লাগে কম।

উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দাদুয়া গ্রামের মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চাঁই বানাতে বাঁশ আর তালগাছের ডাগুরের শাঁস ও নাইলন সুতা লাগে। দিনে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টি মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করতে পারেন তাঁরা। তবে সংসারে যাঁদের সদস্য বেশি, তাঁরা ১০-১৫টি ফাঁদ তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি ফাঁদ তৈরিতে ৮০ থেকে ১৬০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করেন ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা করে। খরচ বাদে লাভ হয় ভালো।

ফকিরপাড়া গ্রামের হান্নান আলী বলেন, ‘আমরা বর্ষার শুরুতে চাঁই বানানো শুরু করি। এখন দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে বর্ষার পানি আসছে। মাছ ধরা শুরু হয়ে গেছে। আমরা চাঁই তৈরি করে ভালো দাম পাচ্ছি। এবার সবকিছুর দাম বেশি। সেই তুলনায় চাঁইয়ের দাম তেমন একটা বাড়েনি। তবে হাটে যে দাম পাচ্ছি আমরা তাতে খুশি। প্রতিদিন ১০-১২টা চাঁই তৈরি করি ও হাটে বিক্রি করি।’

চাঁচকৈড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক জোড়া চাঁই (খোলসুন) আকারভেদে ৪৫০ থেকে ৫৫০, বিত্তি ৩৫০, ভারই ৩০০, ধুন্দি ২৫০, বানা ৪০০, খাদন ৪৫০ ও খালই ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ থেকে আসা পাইকার ছাবেদ মিয়া বলেন, প্রতি হাটে তিনি প্রায় ১ লাখ টাকার চাঁই, বানা ইত্যাদি মাছ ধরার সামগ্রী কিনে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এতে তাঁর খরচ বাদে প্রতি হাটে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।

সিলেটের পাইকার হারুন হাফিজ বলেন, হাটের দিন চাঁচকৈড় থেকে তিনি এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার চাঁই কেনেন। সিলেটসহ পাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করেন।

চাঁচকৈড় হাটের ইজারাদার মুক্তার হোসেন বলেন, বর্তমানে এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মাছ ধরার সামগ্রী বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে চাঁচকৈড় হাট থেকে চাঁইসহ মাছ ধরার ফাঁদ কিনে নিয়ে যান।

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বলেন, ইউনিয়নটির চারদিকেই বিল রয়েছে। একসময় অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ঘরে ঘরে অভাব ছিল। নিজেদের প্রয়োজনেই তাঁরা মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করে মাছ শিকার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর ইউনিয়ন এলাকায় আট হাজারের বেশি মানুষ বাণিজ্যিকভাবে চাঁই বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁদের দেখাদেখি চলনবিলকেন্দ্রিক অন্য উপজেলায়ও কমবেশি চাঁই তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত