Ajker Patrika

বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে জেলায়

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২২, ১১: ১৭
বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে জেলায়

২০২১ সালে ময়মনসিংহ জেলায় বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৯১১টি। ২০২০ সালে ৫ হাজার ৫৩২টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছিল। এক বছরের ব্যবধানে বিচ্ছেদ বেড়েছে ৩৭৯টি। এসব ঘটনার জন্য পরকীয়াকে দায়ী করে বিচ্ছেদরোধে পারিবারিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জেলা রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে জেলায় মোট বিয়ে হয় ১৯ হাজার ৯৩৩টি। এর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৯১১টি। ২০২০ সালে জেলায় মোট বিয়ে হয়েছিল ২১ হাজার ৮টি। বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল ৫ হাজার ৫৩২টি। ২০২১ সালে বিচ্ছেদ বেড়েছে ৩৭৯টি।

জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে হালুয়াঘাট উপজেলায়। গত এক বছরে এ উপজেলায় ১ হাজার ৬৫৭টি বিয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে ৭০৯টি।

সবচেয়ে কম ধোবাউড়া উপজেলায়, ৪৫৩টি বিয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে ২৩২টি। বিচ্ছেদের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সদর উপজেলা। গত এক বছরে এই উপজেলায় বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ৭০১টি। তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে জেলায় বিয়ে ও বিচ্ছেদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া বলেন, প্রতিটি উপজেলার সংশ্লিষ্ট কাজি অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে জেলায় ১৯ হাজার ৯৩৩টি বিয়ে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়েছে ৫ হাজার ৯১১টি। ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে বেশি।

ত্রিশাল উপজেলার আলমগীর হোসেন ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালোবেসে এক তরুণীকে বিয়ে করেন। বিয়ের এক মাস পর জানতে পারেন ওই তরুণী আরেকজনের স্ত্রী। পরে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। স্ত্রীকে ভালোবেসে দেওয়া মোটা অঙ্কের টাকা ও প্রতারণার বিচার চেয়ে ঘুরছেন আলমগীর হোসেন।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ময়মনসিংহ আদালতের আইনজীবী নাহরিন সুলতানা নীলা বলেন, দেশে দিন দিন পরকীয়ার সংখ্যা বাড়ছে, যার প্রভাবে বিবাহবিচ্ছেদও বাড়ছে। অনেক সময় তরুণ-তরুণীরা আবেগে বিয়ে করে ফেলেন। দুই থেকে তিন মাস সংসার করার পর তাঁদের মধ্যে আর ভালো লাগাটা কাজ করে না। তাই ছাড়াছাড়ি হয়। এ ছাড়া আরেকটা বিষয় পরিলক্ষিত হয়, মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পর তাঁর সংসারে মা-বোন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে একসময় নানা ঝামেলায় সংসার ভেঙে যায়। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আসলে নিজেরাই দায়ী।

ময়মনসিংহ সদর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ পরকীয়া। এরপর রয়েছে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, পারিবারিক কলহ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (ফেসবুক) কারণে দিন দিন বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। বিয়ের পর যাঁদের স্বামী বিদেশে চলে যান, তাঁদের অনেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সংসারে কলহ সৃষ্টি হয় এবং বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটে। তবে বিচ্ছেদরোধে পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ মহিলা অধিদপ্তর ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘জেলায় বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা অনেক। এটা আমাদের জন্য খারাপ খবর। একটা বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণ থাকে। এর মধ্যে মাদক, পরকীয়া, মোবাইলে আসক্ত, নৈতিক শিক্ষার অভাবসহ বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। মানুষকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত