Ajker Patrika

অপারেটরের কার্ডে পানি না নিলে হয়রানি

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ০৭
অপারেটরের কার্ডে পানি না নিলে হয়রানি

একসময় বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা গভীর নলকূপ থেকে ঘণ্টা মেপে সেচের পানি নিতেন নগদ টাকায়। সে সময় অভিযোগ ছিল, কম সময় পানি দিয়েও বেশি টাকা নিতেন অপারেটররা। তাই নলকূপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কৃষকদের দিয়েছে প্রিপেইড কার্ড। মিটারে এই কার্ড দিলেই চলে গভীর নলকূপ। কৃষকেরা যতক্ষণ পানি নেন, কার্ডের টাকা ততক্ষণেরই কাটে।

এতে কম সময় পানি দিয়ে কৃষকের বেশি টাকা হাতানোর উপায় বন্ধ হয়েছে গভীর নলকূপ অপারেটরদের। তবে এখনো কোনো কোনো অসাধু নলকূপ অপারেটর কৃষকদের তাঁর নিজের কার্ডে পানি দেন না। কৃষকদের বাধ্য করা হয় অপারেটরের কার্ডে পানি নিতে। তখন কম টাকার পানি দিয়ে বেশি টাকা আদায় করেন অপারেটররা। সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার সময় তথ্য পাওয়া যায়, রাজশাহীর কাঁকনহাট সুরশুনিপাড়া এলাকার তালাই-২ গভীর নলকূপের অপারেটর মোশাররফ হোসেন তাঁর নিজের কার্ডে পানি নিতে কৃষকদের বাধ্য করেন। গত শনিবার (২ এপ্রিল) বিকেলে গভীর নলকূপটিতে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। সে সময় জাহাঙ্গীর আলম নামের এক কৃষকের জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছিল। তবে মিটারে লাগানো ছিল অপারেটর মোশাররফের কার্ড। বিষয়টি স্বীকার করেন মোশাররফ নিজেও। তবে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, সব কৃষকের কার্ড নেই। যাঁদের কার্ড নেই, তাঁরা তাঁর কার্ডে পানি নেন। এতে প্রতি ঘণ্টায় তাঁর ৫-১০ টাকা লাভ হয়। মোশাররফ জানান, তিনি নিজেও চার বিঘা জমি চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে সেচ প্রয়োজন হয় ১ হাজার ২০০ টাকার। তবে চলতি মৌসুমেই তিনি নিজের কার্ডে প্রায় ৩০ হাজার টাকা রিচার্জ করেছেন অন্যদের দেওয়ার জন্য।

উপজেলার কালিদাসপুরের গভীর নলকূপেও শনিবার বিকেলে গিয়ে অপারেটর মমিনুল ইসলামের কার্ড মিটারে লাগানো দেখা যায়। তখন আবদুস সামাদ নামের এক গ্রাম্য চিকিৎসকের জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছিল। মমিনুলের নিজের কার্ডে পানি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কার্ডে টাকা রিচার্জ করে আনতেই গাড়িভাড়া লাগবে ২০ টাকা। এ জন্য অনেক কৃষক নিজের কার্ডে রিচার্জ করতে যান না। তাঁরা সরাসরি ডিপে এসে আমার কার্ডে পানি চান। তখন দিতে হয়।’

শনিবার বিকেলে গোদাগাড়ীর গোলাই বিলে জমিতে সেচ দিচ্ছিলেন এক কৃষক। কার্ড নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, আশপাশের চারটি গভীর নলকূপ এলাকায় তাঁর জমি আছে। এর মধ্যে গোলাই-৩ গভীর নলকূপের অপারেটর মো. কালাম তাঁর নিজের কার্ডে পানি নিতে বাধ্য করেন কৃষকদের। কালামের কার্ডে পানি নিলে সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয়। চাষি নিজের কার্ডে পানি চাইলে কয়েক দিন ঘোরানো হয় সিরিয়ালের কথা বলে। চাষিরা অপারেটর কালামের কাছে অসহায়।

গোলাই-৩ গভীর নলকূপে গিয়ে দেখা যায়, বিন্দারামপুর গ্রামের কৃষক মো. রেন্টুর জমিতে পানি দেওয়া হচ্ছে। তবে মিটারে লাগানো অপারেটর কালামের কার্ড। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেটর কালাম বললেন, ‘সব কৃষকের তো কার্ড নাই। তাই আমার কার্ডে পানি নেয়।’ কৃষকদের বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

বিএমডিএতে আবেদন করলে ১৪২ টাকার বিনিময়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কৃষকদের প্রিপেইড কার্ড দেওয়া হয়। এটিএম কার্ডের মতো এই কার্ড নির্দিষ্ট স্থান থেকে রিচার্জ করতে হয়। তারপর গভীর নলকূপে থাকা মিটারে কার্ড ঢোকালে পানি ওঠে। একেকটি গভীর নলকূপে টাকা কাটে একেক রকম। প্রতি ঘণ্টায় কৃষকের সেচখরচ পড়ে ৯০ থেকে ১৩০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আগে অপারেটর নগদ টাকায় পানি দিতেন। তাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে কৃষকের প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে। এখানে কৃষক তাঁর নিজের কার্ডেই পানি নেবেন। অপারেটর তাঁর নিজের কার্ডে পানি নিতে বাধ্য করতে পারবেন না। কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত