Ajker Patrika

কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে বন্ধ হচ্ছে বেকারি

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ৫৮
কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে   বন্ধ হচ্ছে বেকারি

অস্বাভাবিক হারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে নীলফামারীতে বিপাকে পড়েছেন বেকারি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। অনেক বেকারি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের পথে রয়েছে আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান। বেকারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প দেখছেন না ফ্যাক্টরি মালিকেরা।

বেকারি মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৪৫টি বেকারি নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে পণ্য উৎপাদন করে। করোনাকালে আংশিক বন্ধ ও শ্রমিক ছাঁটাই করে কোনোরকমে ব্যবসা টিকেয়ে রেখেছেন মালিকেরা। করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যখন বেকারি মালিকেরা তাঁদের ফ্যাক্টরি চালু করেছেন ঠিক সে সময়ে দফা দফায় বেকারির কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে ফ্যাক্টরি টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে। বর্তমান বাজার দরে উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রি লাভজনক না হওয়ায় ফ্যাক্টরি চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেকারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ বছর আগের দামেই এখনো বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন বেকারি পণ্য। এতে ফ্যাক্টরি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ফ্যাক্টরি মালিকেরা বেকারি পণ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নানা সংকটে ইতিমধ্যে জেলার পুষ্প, রজনীগন্ধা, মক্কা, সুমন ও আল মদিনা নামের বেকারি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া রজনীগন্ধা বেকারির মালিক মজিবর রহমান বলেন, ‘করোনার সময়েও ফ্যাক্টরি চালু রেখেছি। শ্রমিকেরাও করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মনেপ্রাণে কাজ করছিলেন। কিন্তু গত দুই মাস থেকে বেকারির কাঁচামালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ উঠছে না। তাই লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে বন্ধ করে দিয়েছি প্রতিষ্ঠানটি। এখন পেশা বদল করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান তিনি।

গাউসিয়া কনফেকশনারির মালিক মো. আওরঙ্গজেব বলেন, লোকসানের বোঝা বইতে বইতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমাদের। তাই বেকারি শিল্প টিকিয়ে রাখতে কাঁচামালের মূল্য কমাতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।

তিনি জানান, বর্তমান বাজারে ১৮৬ কেজির এক ড্রাম পাম ওয়েল তেল ২৬ হাজার ৩০০ টাকা, ১৬ কেজির এক কার্টুন ডালডা ২ হাজার ৩৭০ টাকা, ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি ৩ হাজার ৮০০ টাকা, ৭৪ কেজির এক বস্তা ময়দা ৩ হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক মাস আগে এসব পণ্য ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কমে বিক্রি হতো। এর বাইরেও রয়েছে নানা প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য (ফুড গ্রেড) ও পণ্যের প্যাকেজিং সামগ্রী। এগুলোর মূল্যও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও শ্রমিকের মজুরির খরচ। এতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে ফ্যাক্টরি টিকিয়ে রাখা লাভজনক হচ্ছে না।

বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি, নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি মো. আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু জানান, করোনাকালের ব্যবসায়িক মন্দা ও কাঁচামালের উচ্চমূল্যের কারণে ফ্যাক্টরিগুলো সংকটে পড়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রির আয় দিয়ে পোষাচ্ছে না ফ্যাক্টরি মালিকদের। অনেক ক্ষেত্রে লোকসান গুনছে ফ্যাক্টরিগুলো। বেকারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পণ্যের দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। অন্যথায় জেলার ৮০ ভাগ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়বে হাজারো মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত