Ajker Patrika

সংক্রমণের সঙ্গে বাড়ছে ভোট-সমাবেশ-মেলা

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪৪
সংক্রমণের সঙ্গে বাড়ছে ভোট-সমাবেশ-মেলা

টানা তিন মাস করোনার নিম্নমুখী আচরণ অব্যাহত থাকার পর তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আবারও ঊর্ধ্বমুখী ভাইরাসটি। ডেলটার পাশাপাশি আছে নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাব। এ অবস্থায় করোনা নিয়ন্ত্রণে আবারও জোরালো সিদ্ধান্তের ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে তাতে কান দিচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিধি-নিষেধের ঘোষণা, অন্যদিকে সারা দেশে চলছে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও নির্বাচন, এমনকি বাণিজ্য মেলা, পিঠা উৎসব, স্মার্টফোন মেলা এবং পার্বত্য মেলার মতো আয়োজন। মানুষের ঢল নেমেছে পর্যটনকেন্দ্রগুলোয়ও। এসবের কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের মতে, বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে যেকোনো সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাতে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ ঢেউ বিষয় নয়, ফের গণসংক্রমণ বাড়ছে বলা যেতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য মানুষের সচেতনতা দরকার। এটি না হলে করোনার মতো মহামারি মোকাবিলা অনেকটা অসম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২১ সেপ্টেম্বর শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামে। গত দুই দিনে তা আবারও কাছাকাছি থাকলেও এবার তা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় ঢেউয়ে অনেকটা প্রবেশ করল বাংলাদেশ।

করোনার ভয়াবহতা যখন উঁকি দিচ্ছে, তখন গত বছরের ন্যায় এবারও সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। গতকাল ছুটির দিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, আগের দিনগুলোর তুলনায় বেড়েছে লোকসমাগম। মেলায় আসা অধিকাংশের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জোর দিচ্ছি। প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। একটু পরপর মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। সবাই ভাবে মেলায় আসছে, চেহারাটা যদি একটু না দেখানো যায়, তাহলে এসে কী লাভ?’
একই অবস্থা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত পিঠা উৎসবে। বারবার মাস্ক পরা-খোলার বিরক্তিতে অনেকে মাস্ক খুলেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পিঠা বিক্রেতাদের অনেককেই দেখা যায় মাস্ক খুলে কাজে ব্যস্ত থাকতে। শুধু এসব উৎসব নয়, গত তিন সপ্তাহে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিজয় দিবস থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ নানা দিবস পালন করেছে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই। এতে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। এ ছাড়া সারা দেশে চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। অপেক্ষায় আছে ঢাকার কাছের শহর নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন। যেখানে প্রার্থী-কর্মী-সমর্থক কারোরই মাস্ক পরতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল—কেউ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি।
অথচ এই সময় ধরেই লকডাউন ছাড়া নানা বিধিনিষেধ আরোপের একের পর এক ঘোষণা দিচ্ছে সরকার। সবশেষ স্কুল-কলেজ, শপিং মল, ট্রেন-লঞ্চে বাধ্যতামূলক টিকা সনদ দেখানোর বিধান চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। এমনকি কোনো অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ কতজন অংশ নিতে পারবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হতে পারে।

তবে সরকারের এসব সিদ্ধান্ত শুনতে যতটা আশার আলো দেখায়, ততটাই হতাশা তৈরি করে গত প্রায় দুই বছরে নেওয়া করোনার নানা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চিত্রে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলছেন, ‘এখনো ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ পূর্ণ ডোজের টিকা পায়নি। অথচ টিকা না নেওয়া থাকলে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পাশাপাশি লঞ্চ, ট্রেন ও বিমানে যাতায়াত করতে পারবে না বলা হচ্ছে। এতে দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে। বরং আমাদের সংক্রমণের তীব্রতাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘বিধিনিষেধগুলো দেওয়া ও বাস্তবায়নে মেলবন্ধন থাকা দরকার, সেটি না থাকায় ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এক পক্ষ দিচ্ছে, অন্য পক্ষ মানছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকের মাস্ক কেনার সুযোগ ও সামর্থ্য হয় না। এসব মানুষকে বিনা মূল্যে মাস্ক দেওয়া যেত। কিন্তু শুধু নির্দেশনা দিয়েই আমরা দায়িত্ব শেষ করছি। ফলে এবারও কাজীর গরু কেতাবেই থাকবে, গোয়ালে আর আসবে না।’
এদিকে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত দেশে ১০ জনের শরীরে নতুন এই ধরনটি পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজনের তালিকায় আরও ২৫ জন। ওমিক্রনের ব্যাপক বিস্তারের শঙ্কা বাড়াচ্ছে সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলোর করোনা পরিস্থিতি। গত এক দিনে দেশটিতে নতুন লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

দেশে সংক্রমণ বাড়ায় কাতারের ভ্রমণনীতির ব্যতিক্রমী লাল তালিকায় পড়েছে বাংলাদেশও। দেশটির জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে এ তালিকায় রেখেছে। এর ফলে কাতারে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি যাত্রীদের অধিকতর কড়াকড়ির মুখে পড়তে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে যেভাবে নির্দেশনা আসছে, এভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে না। এ জন্য দরকার পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। আমাদের ভারতকেন্দ্রিক ঝুঁকি কমাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, তার খেসারত আমাদেরও দিতে হবে।’

বিশ্বে করোনা রোগী ৩০ কোটি ছাড়াল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে এশিয়ার দেশ চীনে সর্বপ্রথম শনাক্ত হয়েছিল করোনা। এরপর গত দুই বছরে এর শিকার হয়েছে ৩০ কোটির বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে ২৫ লাখ ১১ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাত হাজারের বেশি মানুষের। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ১ হাজার ১৪৬ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি মিলেছে। এদিন শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গত ১৬ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। তবে গতকাল করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত নারী ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত