Ajker Patrika

প্রসঙ্গ: নতুন শিক্ষাক্রম

মাসুদ উর রহমান
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১০: ২৮
প্রসঙ্গ: নতুন শিক্ষাক্রম

নতুন শিক্ষাক্রম-২০২২ নিয়ে কিছু লিখতে মন চাইছে। তবে তার আগে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা একটু শেয়ার না করলে সেই লেখা যেমন পূর্ণতা পাবে না, তেমনি সবার বোধগম্যও হবে না। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। পৃথিবীর সব দেশেই বিজ্ঞানপড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের দেশে।

এই যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী দিন দিন কমে যাচ্ছে তার অনেকগুলো কারণের উল্লেখযোগ্য: বিজ্ঞানশিক্ষা তুলনামূলকভাবে কঠিন, গ্রামের স্কুলগুলোতে দক্ষ বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাব এবং যাঁরা আছেন তাঁদের অনেকেই মানসম্মত শিক্ষাদানে অনাগ্রহী বা আপডেটেড জ্ঞান বা পাঠপ্রস্তুতি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে যান না বা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় যেতে পারেন না।

আছে কিছু শিক্ষকের অতিরিক্ত প্রাইভেটপ্রীতি! শিক্ষকদের এই অংশটি একটি বলয় তৈরি করে প্র্যাকটিক্যালের নম্বরকে পুঁজি করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করে। ফলে প্রতিটি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে হয় বলে বিজ্ঞানশিক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য।

বর্তমান বাস্তবতায় সচেতন-সচ্ছল-সামর্থ্যবান অভিভাবকদের সন্তানেরাই বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে এবং শহরাঞ্চলে সেটি হয়ে গেছে পুরোপুরি কোচিংনির্ভর। অপ্রিয় সত্য হচ্ছে শহরাঞ্চলেরও অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা শ্রেণিকক্ষে শতভাগ দেন না বা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় দিতে পারেন না। তা ছাড়া, আগ্রহী ও মনোযোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। কেননা, সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষায় এখন শিক্ষার্থীদের এতটা ক্লাসনির্ভর হতে হয় না। পরীক্ষাপদ্ধতি আর মূল্যায়নের উদারতায় বোর্ড পরীক্ষায় পাস এখন মামুলি ব্যাপার! উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সেটি আরও বেশি সত্যি।

একটি উদাহরণ দিই। কিছুদিন আগে একজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, যার মূল কথা এ রকম—পেটের দায়ে বিদেশ গিয়েও পড়াশোনায় তিনি অদম্য। প্রতিটি শিক্ষাবর্ষ শেষে কেবল পরীক্ষার আগে ছুটিতে এসে পরীক্ষা দিয়েই তিনি অর্জন করেছেন স্নাতক সম্মান! তাঁর এই কৃতিত্বে কমেন্ট বক্সে অভিনন্দনের হিড়িক পড়েছে যদিও, কিন্তু যে সত্যটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তা হলো, কোনো ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট না করেও এ দেশে এখন অনার্স পাস করা যায়। অর্থাৎ এই হচ্ছে আমাদের উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি!

কাজেই এই বাস্তবতা মাথায় নিয়েই হয়তো নতুন শিক্ষাক্রমের আবির্ভাব। তাদের ভাষ্যমতে, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন হবে। মোটা দাগে সেই পরিবর্তন হলো:

১. দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে ১০টি বিষয় পড়তে হবে, এখনকার মতো মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকবে না।

আমার আশঙ্কা হচ্ছে এখন মাধ্যমিকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত পড়েও বড় সিলেবাস এবং তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান পড়তে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আগ্রহী হয় না। দেশের ৮০ শতাংশ কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ২০ জনের আশপাশে। সে ক্ষেত্রে মাধ্যমিকে শুধু ১০০ নম্বরের বিজ্ঞান পড়ে উচ্চমাধ্যমিকের চারটি বিষয় পড়ার উপযুক্ততা তাদের কেমন করে তৈরি হবে? যারা সাহস করে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে যাবে, বছর দুই পর তাদের ফলাফলে ধস নামা দেখতে আমরা প্রস্তুত আছি তো?

২. পরীক্ষা ও সনদকেন্দ্রিক পড়াশোনার পরিবর্তে পারদর্শিতাকে গুরুত্ব দিয়ে একেবারে দশম শ্রেণি শেষে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে দ্বিতীয় পাবলিক পরীক্ষা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশের সঙ্গে পাবলিক পরীক্ষার ৭০ শতাংশ যোগ করে ফলাফল নির্ধারণ হবে।

এই পয়েন্টে আমার জিজ্ঞাসা—বছর কয়েক আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন অর্থাৎ School Based Assessment সংক্ষেপে SBA চালু হয়েছিল এবং বছর শেষে ‘স্যারের বাসায় এসো’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল SBA-এর পূর্ণ রূপ! শুধু তা-ই নয়, আমাদের উচ্চশিক্ষাতেও এ রকম অর্থাৎ ইনকোর্স নামে প্রতিটি বিষয়ে ২০ শতাংশ নম্বর সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল এত দিন। কিন্তু অপব্যবহারের কারণে গত বছর থেকে এই ইনকোর্স পদ্ধতি এখন বিলুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রমের ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন কতটা কার্যকর হবে অর্থাৎ ‘স্যারের বাসায় এসো’তে যে আবারও পর্যবসিত হবে না, তার নিশ্চয়তা আসলে কতটুকু?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ৭ হাজার টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত