Ajker Patrika

পলান সরকার

সম্পাদকীয়
পলান সরকার

পলান সরকারকে কেউ বলতেন বইপ্রেমী, কেউ বলতেন বইপাগল, আবার শিশুরা বলত বইদাদু। তাঁর আসল নাম হারেজ উদ্দিন।

তিনি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার নূরপুর মালঞ্চী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ পান। শৈশবে বাবাকে হারান। তারপর আর পড়াশোনা হয়নি। তখন থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামে নানার বাড়িতে বড় হয়েছেন। বাউসায় কোনো বিদ্যালয় ছিল না। এই মনঃকষ্ট থেকেই পরবর্তী জীবনে তিনি এখানে নিজের জমি দিয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও বই পড়া ছাড়েননি, বরং বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজে বই কিনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়তে দিতেন। একটি-দুটি করে বই পড়তে দিতেন পাড়ার লোকদের। ক্রমে আশপাশের গ্রামে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। নিজে বই নিয়ে ফেরিওয়ালার মতো গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে বেড়াতেন। এটাই ছিল পলান সরকারের ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হয়ে ওঠার গল্প।

শেষের দিকে পলান সরকার বই পড়ার আন্দোলনটা শুধু তাঁর পাঠাগারকেন্দ্রিক না রেখে একটু অন্যভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বই বিতরণের জন্য এলাকাভিত্তিক পাঁচটি বিকল্প বই বিতরণ কেন্দ্র তৈরি করেন। এর জন্য কোনো বাজারের বইপ্রেমী দোকানিকে তিনি বেছে নেন। দোকানমালিক তাঁর দোকানে মালামালের পাশাপাশি পলান সরকারের বইও রাখেন। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজন বই নিয়ে যান। মাসে এক-দুবার করে পলান সরকার দূরবর্তী এই কেন্দ্রগুলোয় ছেলে হায়দার আলীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে চেপে গিয়ে নতুন বই দিয়ে পুরোনো বই নিয়ে আসতেন। তবে শেষ বয়সে এই কাজগুলো ছেলেকে দিয়েই বেশি করাতেন।

শিক্ষা বিস্তারে ব্যতিক্রমী আন্দোলন গড়ে তোলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ তাঁকে ‘সাদামনের মানুষ’ খেতাবে ভূষিত করে। সমাজসেবায় তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

বইয়ের ফেরিওয়ালা খ্যাত মানুষটি ২০১৯ সালের ১ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত