Ajker Patrika

গো-মাংসের দাম

সম্পাদকীয়
গো-মাংসের দাম

বেশ কিছুদিন ধরেই যে ঘটনাটা ঘটে চলেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়, তাকে অলৌকিক ঘটনা বলে ভ্রম হতে পারে। গরুর মাংসের দাম হঠাৎ করে প্রায় ২০০ টাকা কমে  গেছে, এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ৮০০ টাকায় পৌঁছে যাওয়া গরুর মাংস এখন ৬০০ টাকার কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও অবশ্য দাম ধরে রাখা হয়েছে ৭০০ টাকায়। আমাদের দেশে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে তা আবার কমার কোনো নজির প্রায় নেই বললেই চলে।

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, চারটি কারণে মাংসের এই কমতি দাম। বিক্রি কমে যাওয়া, চোরাইপথে ভারতীয় গরু আসা, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি থাকা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ঠেকাতে খামারিরা নিজেরাই গরু কেটে মাংস বিক্রি করছেন। যে চারটি কারণ দেখানো হয়েছে, সেই কারণগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, মাংসের দাম কমার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজ করেনি। নেতিবাচক ও ইতিবাচক যে কারণগুলো রয়েছে, তার সবই ক্রেতা-বিক্রেতার রসায়নের ফল।

আমরা লক্ষ করেছি, গত দু-তিন বছরে হঠাৎ করে কোনো কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে সপ্তাহখানেক বা আরও কিছু বেশি সময় বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখা হয়েছে। শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছাড়া এই অসাধু চক্র টিকে থাকতে পারত না। সরকারি সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে সজাগ হয়নি। তাই ডিম, পেঁয়াজ, আলুসহ নানা পণ্য অপ্রত্যাশিতভাবে অভিজাত হয়ে গেছে, সেই ঘরানার মূল্যে বিক্রি হয়েছে সাধারণ বাজারে। গরুর মাংসের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা বিস্ময়কর। ধাপে ধাপে কয়েক বছরের মধ্যে তা ৪০০ টাকার কাছাকাছি দাম থেকে ৮০০ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল। এ সময়কালে মানুষের আয় বাড়েনি; বরং মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রকৃত আয় আগের তুলনায় কমেছে। এ রকম একটা ভয়াবহ সময়ে মাংসের দাম এভাবে বাড়িয়ে সাধারণ ক্রেতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। মাংস ব্যবসায়ীদের ভাবখানা ছিল—‘খাইলে খাইবি, না খাইলে না খাইবি’ ধরনের।

জনগণ এই মানসিকতার যোগ্য জবাব দিয়েছে গরুর মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়ে। কিন্তু সেটা কোনো আন্দোলনের ফলে হয়নি। সত্যিই যদি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতার জন্ম হতো, তাহলে পণ্য না কিনে বা খুব কম কিনে তার প্রতিবাদ জানাতে পারলে সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারত না। কিন্তু আমাদের ক্রেতাদেরও সেই ঐক্য নেই যে দাম বাড়লে রুখে দাঁড়াবে; বরং আতঙ্কিত হয়ে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য কেনার প্রবণতা আমাদের আছে।

গরুর মাংসের দাম কমেছে, এটা সুসংবাদ। যেসব পণ্যের দাম কারণে-অকারণে বাড়ানো হয়েছিল, সেগুলোর দামও কমে এলে স্বস্তি পাবে মানুষ। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, সিন্ডিকেটগুলোও নিশ্চয়ই এখন ভাবছে, কী করে এর মধ্য থেকেও ফায়দা লোটা যায়। তাই সেদিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। বাণিজ্যে সততা ফিরে আসা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত