Ajker Patrika

মমতাজ হাসপাতাল

সম্পাদকীয়
মমতাজ হাসপাতাল

জয়নাল আবেদিনের কথা কি মনে আছে? সেই যে রিকশা চালিয়ে টাকা জমিয়ে ২০০১ সালে যিনি একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছিলেন? সে সময় এই উদ্যোগ নিয়ে আলোড়ন উঠেছিল। একজন সৎ মানুষ চাইলেই অনুপ্রেরণাদায়ক কোনো কাজ করতে পারেন। জয়নাল আবেদিন সে রকমই একজন মানুষ।

জয়নাল আবেদিন ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে সেই সঞ্চিত টাকা দিয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার টান হাসাদিয়া গ্রামে। নিজের মেয়ে মমতাজের নামে এর নাম দিয়েছিলেন ‘মমতাজ হাসপাতাল’। গ্রামের দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে জয়নাল আবেদিন ২৪ শতাংশ জায়গা কিনে আধা পাকা ঘর করে প্রতিষ্ঠা করেন হাসপাতালটি।

পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেব, জয়নাল আবেদিনের বাবা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এটা ছিল জয়নালের জন্য বড় আঘাত। এই আঘাত তাঁকে বড় এই কাজে টেনে আনে। সামর্থ্যের দিক চিন্তা না করেই নিজের শারীরিক শক্তি পুঁজি করে এই মহৎ উদ্যোগ সফল করে তোলেন জয়নাল আবেদিন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আশপাশের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল হয়ে ওঠে হাসপাতালটি। বিত্তবানদের সহযোগিতায় এটি ভালোভাবেই চলছিল। এই এলাকায় হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গ্রামের মানুষকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো না। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বেশ কয়েক ধরনের ওষুধও বিনা মূল্যে দেওয়া হতো এখান থেকে।

জয়নাল আবেদিন গত বছর মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছে। একটি ওষুধ কোম্পানি বিনা মূল্যে ওষুধ দিত, তারাও তাঁর মৃত্যুর পর সেটা বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও জয়নাল আবেদিনের ছেলের চেষ্টায় সপ্তাহে তিন দিন এখনো চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান আছে। কিন্তু আশঙ্কা থেকে যায়, এভাবে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলতে চলতে একসময় মহৎ এই উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মূলত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু আমাদের দেশে নানা কারণেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ আমাদের জন্য গাল ভরা স্লোগানেই পর্যবসিত হয়েছে। সত্যিকারের দেশপ্রেম ও সততা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারে।

কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমাদের গ্রামগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনো নির্ভর করে প্রাচীন আমলের চিকিৎসাপদ্ধতির ওপর।আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ তাদের নেই বললেই চলে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় ঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না বলে যে অভিযোগ 
রয়েছে, তা অনেকাংশেই সত্য।

মমতাজ হাসপাতাল বাঁচানোর জন্য এর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি তাঁর অক্ষমতার কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কথা বলেন। আমরা আশা করব, প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি বন্ধ হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর দিকে বিশেষ নজর দেবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষেরাও এই সৎ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, এই আশাও আমরা করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বোঝার ভুলের খেসারত দিচ্ছে ভারত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত