Ajker Patrika

বীরবল

সম্পাদকীয়
বীরবল

বীরবল নিজে বীরও ছিলেন না, রাজাও ছিলেন না। কিন্তু মোগল সম্রাট আকবর তাঁকে ভালোবেসে বীরবল নাম ও রাজা উপাধি দিয়েছিলেন। বীরবলের প্রকৃত নাম ছিল মহেশ দাস।

বীরবল প্রথম জীবনে সংগীতের মানুষ ছিলেন। বাবার কাছ থেকে ধর্মীয় সংগীত ও ব্রজ কবিতায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।পাশাপাশি তিনি নিজের চেষ্টায় হিন্দি, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আর এসব গুণের কারণেই তিনি রাজপুতের দরবারে সভাকবির চাকরি পান। সম্রাট আকবরের সঙ্গে নাটকীয় পরিচয়ের পর ১৫৫৬ সালে তাঁর রাজসভায় অন্তর্ভুক্ত হন বীরবল।

মূলত বীরবল বাদশাহ আকবরের দরবারে একজন কবি ও গায়ক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সব পরিচয় পেছনে ফেলে উপস্থিত বুদ্ধি, অসাধারণ মেধা এবং সমরবিদ্যায় দক্ষতার জন্য তিনি আকবরের খুব কাছের মানুষ হয়ে যান। অসাধারণ রসবোধ ও প্রখর বুদ্ধির জোরে বেশ অল্প সময়ে তিনি রাজসভায় উচ্চপদ লাভ করেন। আকবরের দরবারে গুণী ব্যক্তিদের বিশাল সমারোহের মধ্যে নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বলা হতো ‘নবরত্ন’। এই নবরত্নের সবচেয়ে ‘উজ্জ্বল রত্ন’ ছিলেন বীরবল।

সম্রাট আকবরও প্রায় সব বিষয়ে বীরবলের বুদ্ধি-পরামর্শ নিতেন। ১৫৮৬ সালের ২৫ মার্চ আকবর তাঁকে এক অভিযানে ভারতের উত্তর-দক্ষিণ দিকে, অর্থাৎ বর্তমান আফগানিস্তানে পাঠান। কিন্তু এই অভিযান অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয় এবং বিদ্রোহী উপজাতিদের আক্রমণে বহু সৈন্যসহ বীরবল মৃত্যুবরণ করেন।

এটি ছিল আকবরের সর্ববৃহৎ সামরিক ব্যর্থতা এবং সেনা ধ্বংসের ঘটনা। এই ঘটনার পর আকবর প্রচণ্ড শোকাহত হন এবং তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সভাসদের মৃত্যুতে তিনি টানা দুদিন কোনো খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেননি। তিনি আরও বেশি যন্ত্রণাকাতর হন, কারণ হিন্দু শবদাহ রীতির ফলে তিনি বীরবলের দেহ আর কোনো দিনই দেখতে পাননি। তিনি এই ঘটনাকে তাঁর সিংহাসন লাভের পর সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত