Ajker Patrika

অসাম্প্রদায়িক ধারা আর ফিরবে কি

সম্পাদকীয়
অসাম্প্রদায়িক ধারা আর ফিরবে কি

দেশের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক ধারা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে আছে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টিও। কিছু মানুষ খুব ভালো আছে, আবার অনেক মানুষ কোনোরকমে বেঁচে আছে। এসব নিয়ে কারও কারও মধ্যে কিছু উদ্বেগ থাকলেও এই দুই সমস্যা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে কোনো বিশেষ চিন্তা-ভাবনা কিংবা রাজনৈতিক উদ্যোগ-পরিকল্পনার কথা শোনা যায় না। এটা ঠিক যে সাম্প্রদায়িক ভাবধারাপুষ্ট ও বৈষম্যের রাজনীতির শিকড় প্রথিত আছে অতীতের গভীরে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শাসকশ্রেণি বাঙালির ওপর একটি বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জারি রেখেছিল। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থনৈতিক বরাদ্দের প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালিকে সমানুপাতিক ন্যায্য পাওনা থেকে বরাবর বঞ্চিত করেছে পাকিস্তানি শাসক-শোষকেরা। বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ করেছে বাঙালি জনগোষ্ঠী, সংগ্রাম করেছে একটি বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।

সংস্কৃতির প্রশ্নেও বাঙালির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত আত্মপরিচয় বিকাশের অন্তরায় হিসেবে সক্রিয় থেকেছে পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি। পাকিস্তানি মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ হিসাবে বাঙালি জনগোষ্ঠীর ন্যায্য আকাঙ্ক্ষা ও দাবি ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি বাঙালির এই ন্যায্য দাবিকে কখনো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, কখনো রাজনৈতিক ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে অবজ্ঞা করেছে। স্বভাবতই বাঙালি তার নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ ইতিহাসবোধ থেকেই ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির বিপরীতে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষাবলম্বন করেছে। ধর্মকে রাষ্ট্র ও রাজনীতির পরিমণ্ডলের বাইরে ব্যক্তিজীবনের একান্ত অঙ্গনে নিরাপদ রাখাই উত্তম মনে করেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যের অবসান ঘটানো। স্বাধীনতার পর রাজনীতিতে নতুন ধারা চালুর চেষ্টা হলেও তা কার্যকর হয়নি। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে প্রকৃত রাজনীতিকদের রাজনীতির মাঠ থেকে হটিয়ে দিয়ে যে বিষবৃক্ষের চারা দেশের রাজনীতিতে রোপণ করা হয়েছিল, সেই চারাই আজ বড় হয়ে উঠেছে। দেশে পুঁজির অবাধ বিকাশের নামে ব্যাংকের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল নব্য ব্যবসায়ীদের জন্য। তাতে দেশে প্রকৃত শিল্পপতি, পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ী শ্রেণি তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছে লুটেরা শ্রেণি এবং লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচারের প্রবল ক্ষমতাশালী একটার পর একটা সিন্ডিকেট। দেশের গণতান্ত্রিক ধারার যেসব দল ও সংগঠন রয়েছে, সেই দেশপ্রেমিক শক্তি যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করা হয়েছে।

এখন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান দ্বন্দ্ব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ধারা বনাম পাকিস্তানি তথা সাম্প্রদায়িক-ধর্মান্ধ-জঙ্গিবাদী ধারা। প্রথম ধারাকে শক্তিশালী ও সংহত না করলে দেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। দেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য যে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক উদ্যোগ ও ত্যাগী নেতৃত্বের প্রয়োজন, তাতে রয়েছে প্রচণ্ড ঘাটতি। মুক্তিযুদ্ধের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, তা যদি পূরণ করতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক শক্তির একটি নতুন মেরুকরণ জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত