Ajker Patrika

কারাগারে কালো ব্যাজ

অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৪২
কারাগারে কালো ব্যাজ

একুশের প্রথম বার্ষিকী কীভাবে পালন হয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, তার একটা বর্ণনা পাওয়া যায় সরদার ফজলুল করিমের বয়ানে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে তখনো যাঁরা নিরাপত্তা বন্দী হিসেবে কারাগারে ছিলেন, তাঁরা হলেন অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, পাবনার আবদুল মতিন, টাঙ্গাইলের শামসুল হক প্রমুখ। তাঁরা ছিলেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দোতলায়।

১৯৫৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে এই নিরাপত্তা বন্দীরা ঠিক করলেন, জেলে বসেই একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করবেন। ঠিক হলো, সবাই এই দিন উপবাস করবেন, কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এভাবেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সিদ্ধান্ত তো হলো, কিন্তু কালো ব্যাজ কোথায় পাওয়া যাবে? সেটা অবশ্য প্রাথমিকভাবে কেউ জানল না।

অজিত গুহ খুব ভোরে ওঠেন। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে বই পড়তে বসেন। সেদিন শুধু তিনি নন, অন্য সবাই ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে গেছেন এবং সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, অজিত গুহ সবার জন্য কালো ব্যাজের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আগের রাতেই ব্যাজের ব্যবস্থা করে ফেলবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। সে কথা আর কাউকে জানতে দেননি।

কীভাবে তিনি কালো ব্যাজ তৈরি করলেন? ব্যাপারটা কঠিন কিছু নয়। অজিত গুহের ছিল এক জোড়া সিল্কের কালো মোজা। একেবারে মিশকালো। তিনি তাঁর একটি মোজা কেটে সবার জন্য কালো ব্যাজ তৈরি করেছিলেন।

বেলা বাড়তেই জেলখানার পাশ দিয়ে নাজিমুদ্দিন রোড ধরে ছোট ছোট মিছিল যেতে থাকে, সেসব মিছিলে রয়েছে কালো পতাকা। মোহাম্মদ তোয়াহার ছিল একটি কালো কার্ডিগান। বন্দীরা সেই সোয়েটার দুলিয়ে কালো পতাকা দোলানোর দুঃখ ভুলেছিলেন। জেলের জানালায় কালো কার্ডিগানের কালো পতাকা আর বুকে সবার কালো সিল্কের মোজার কালো ব্যাজ।

সূত্র: সরদার ফজলুল করিম, বায়ান্নর কারাগার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত