Ajker Patrika

১৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ‘নয়ছয়’, তদন্তে ইউজিসি

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১৮: ২৬
১৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ‘নয়ছয়’, তদন্তে ইউজিসি

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ২৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এই অনিয়ম তদন্তে তিনজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। গতকাল রোববার এই তিন কর্মকর্তা রুয়েটে এসেছেন। আজ সোমবারও তাঁরা প্রকল্পের বিষয়ে সবকিছু খতিয়ে দেখবেন।

জানা গেছে, সরকারি সংস্থার মাধ্যমেই রুয়েটের একটি বিভাগ খোলার প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে জানতে পারে ইউজিসি। এরপর গত ২০ এপ্রিল ইউজিসি বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। সেদিন ইউজিসির সচিব এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ফেরদৌস জামান এবং দুই উপপরিচালক রোকসানা লায়লা ও মো. আব্দুল আলীমকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই তিন কর্মকর্তা গতকাল রোববার ও আজ সোমবার রুয়েটে অবস্থান করবেন বলে গত ১৯ মে এক চিঠি পাঠিয়ে রুয়েটকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী গতকাল এ তিন কর্মকর্তা রুয়েটে আসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রুয়েটে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করার প্রকল্পে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০০৯ সালের ১ জুলাই ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ৩০ জুন করা হয়। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোট পাঁচজন। সবশেষ পিডি ছিলেন অধ্যাপক আবদুল আলীম। প্রকল্প চলাকালে তিনি রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক ছিলেন। 

রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের এই অধ্যাপক প্রকল্প শেষে অবশিষ্ট টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি বলে অভিযোগ পেয়েছে ইউজিসি। এ ছাড়া প্রকল্প শেষ হলেও বিধি মোতাবেক ব্যাংক হিসাব বন্ধ না করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সূত্র বলছে, রূপালী ব্যাংকের রুয়েট শাখার ওই ব্যাংক হিসাবে এখনো প্রায় অর্ধকোটি টাকা আছে। তবে প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন আলীম।

নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ৯ আগস্ট আলীম প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে ইউজিসিতে প্রতিবেদন পাঠান। এতে তিনি প্রকল্পের বরাদ্দের ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার সবই ব্যয় হয়েছে বলে জানান। তবে ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ যেদিন শেষ হয়, সেদিনও ব্যাংক হিসাবে ছিল ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা। এরপর ২০১৭ সালের ১ মার্চ ছিল ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা। ধীরে ধীরে এ টাকা কমতে থাকে। ২০২০ সালের ৩০ জুন ছিল ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা। প্রকল্প শেষেও বেঁচে যাওয়া প্রায় ১৩ কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্যাংকে ১৩ কোটির বেশি টাকা থাকা অবস্থায় সব ব্যয় হয়েছে—এমন প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল আলীম বলেন, যেদিন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়, সেদিনই ইউজিসি শেষ কিস্তির টাকা দিয়েছিল। আবার প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে ইউজিসি প্রতিবেদনও চেয়েছিল। যেহেতু ঠিকাদারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছিল, কিন্তু বিল দেওয়া বাকি ছিল; তাই বলা হয়েছিল, সব টাকা খরচ হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম হয়নি দাবি করে আলীম জানিয়েছেন, ইউজিসির সচিবসহ অন্য দুই উপপরিচালক রুয়েটে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তাঁর আগের চার পিডিকে ডাকা হয়নি। এটি কোনো ধরনের তদন্ত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ইউজিসি যে টাকা দিয়েছিল, তা ঠিকঠাক খরচ হয়েছে কি না, কোন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে—এসব দেখতে কর্মকর্তারা এসেছেন। প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে একক স্বাক্ষর দিয়ে টাকা তোলা যায় না। তাই কোনো অনিয়মও হয়নি।

জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, ‘সরকারের একটি সংস্থার মাধ্যমেই আমরা কিছু অনিয়মের খবর পেয়েছি। সেগুলো খতিয়ে দেখতেই রুয়েটে এসেছি। আজ (রোববার) দুপুরের পর আমরা কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। রাতে এগুলো বিশ্লেষণ করব। আগামীকাল (সোমবার) আবার সবকিছু দেখব। তারপর অনিয়ম হয়েছে কি না, আমরা সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত