Ajker Patrika

পদ্মাপাড়ের বালু দেদার বিক্রি, ৪ জনের কারাদণ্ড

মো. শামীম হোসেন, পাংশা (রাজবাড়ী)
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১১: ০৫
পদ্মাপাড়ের বালু দেদার বিক্রি, ৪ জনের কারাদণ্ড

রাজবাড়ীর পাংশায় পদ্মা নদী থেকে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে মাটি ও বালি কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার প্রভাবশালীরা এই মাটি ও বালি কেটে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে পড়ছে বেড়িবাঁধ।

উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের পাশের পদ্মা নদী থেকে ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের সুরুজ মল্লিক ও সুমন সরদারসহ কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে মাটি ও বালু কাটছেন বলে জানান স্থানীয়রা। মাটি ও বালু কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি হলেই এসব জমির ফসল বিলীন হয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বালি ও মাটি কাটা বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে নাম প্রকাশ করতে চান না এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, প্রায় প্রতি বছরই এই এলাকায় নদীতে চর জাগে। তাঁরা সেখানে ধান, আখ, বাদামসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ভেকু (মাটিকাটা যন্ত্র) দিয়ে মাটি ও বালি কেটে নিচ্ছে।

প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীর করে মাটি ও বালু কাটায় তাঁদের ফসলি জমি ভেঙে পড়ে। পরে তাঁরা অভিযুক্তদের কাছে মাটি চুক্তিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন। বর্ষা মৌসুমে সেটাই তাঁদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তাঁরা আরও বলেন, এভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি কাটা চলতে থাকলে আগামী বর্ষা মৌসুমে কোনোভাবেই বেড়িবাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না, ভিটেহারা হবে হাবাসপুর ইউনিয়নের কয়েকশত পরিবার।

অভিযুক্ত সুরুজ মল্লিক বলেন, গত ৪-৫ দিন আগে থেকে মাটি ও বালু কাটা শুরু করেছেন। তবে জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি ও বালু কাটার চুক্তি করেই ভেকু নামিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চড়ঝিকড়ি গ্রামের পদ্মা নদীর বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে চারজনকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ আলী গত সোমবার রাতে এই দণ্ড দেন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, উপজেলার চর-আফড়া গ্রামের হারুন (৩৫), যশাই ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের সাকিব, গুরুচন্ডিপুর গ্রামের আলম শেখ ও কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের মামুন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী বলেন, স্থানীয় একাধিক চক্র দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি বিক্রি করে আসছিল। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বন্ধের নির্দেশনা দিলেও বিভিন্ন কৌশলে তারা মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছিল।

তাই গত সোমবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে বালু কাটার সঙ্গে জড়িত চারজনকে আটক করা হয়। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে সাত দিনের কারাদণ্ড দেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, গত বছরে প্রায় ১৫ হেক্টর জমির ফসল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছরেও উপজেলার হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে জাগা চরে প্রায় পাঁচ শতাধিক জমিতে ধান ও আখসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেছেন কৃষকেরা।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের বিষয়ে তিনি জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত