Ajker Patrika

পরিচয় মেলে না লাশগুলোর

নরসিংদী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৯: ২৭
পরিচয় মেলে না লাশগুলোর

নরসিংদী থেকে ভৈরব পর্যন্ত ট্রেনের চাকার নিচে কাটা পড়ে মৃত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের দাফন করা হয় নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পাশে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত এমন অন্তত ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর বেশির ভাগ লাশেরই দাফন সম্পন্ন হয় প্রায় ছয় শতাংশ জায়গায়।

দীর্ঘদিন ধরে মূলত এখানে বেওয়ারিশ লাশ মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এসব মরদেহের বেশির ভাগের পরিচয় শনাক্ত হয় না। কখনো কখনো শুধু মরদেহের পরনের কাপড় দেখেই নিশ্চিত হতে হয় স্বজনদের। পরিচয় শনাক্ত হলেও, চিহ্নিত করা যায় না মাটিচাপা দেওয়া মরদেহের। এ কারণে স্বজনেরা তাঁদের প্রিয়জনের লাশ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন।

নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২৫টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই মর্গের ডোম আবদুল লতিফ সরকার লাশগুলোর মাটিচাপা দিয়ে থাকেন। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, গত ১৬ বছরে রেলওয়ের ওই জমিতে সমাহিত করা হয়েছে প্রায় এক হাজার অজ্ঞাতনামা লাশ।

জানতে চাইলে ডোম আবদুল লতিফ সরকার বলেন, ‘আমার যদি সামর্থ্য বা ক্ষমতা থাকত, তাহলে প্রতিটা লাশ কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজা শেষে, বাঁশ বা চাঁটাই দিয়ে সুন্দর করে কবর দিতাম। বরাদ্দ বা ক্ষমতা না থাকায় বাধ্য হয়ে লাশগুলো মাটিচাপা দিতে হয়। এতে আমার খুব কষ্ট লাগে।’

লতিফ সরকার আরও বলেন, ‘প্রতিটি লাশ দাফনের জন্য আমি ১ হাজার ২০০ টাকা পাই। লাশ পড়ে থাকে। কেউ এগিয়ে আসে না। আমি কাউকে সঙ্গে নিয়ে লাশ মর্গে নিয়ে যাই। ভ্যান ভাড়া আছে, সঙ্গে যে লোক কাজ করে, তাঁকেও টাকা দিতে হয়। কাফনের কাপড়, চাঁটাই, আগরবাতি, আঁতর ইত্যাদি কিনে দাফন করতে আড়াই হাজার টাকার মতো খরচা লাগে। এই টাকা আমি কই পাব? কেউ যদি দয়া করে কখনো টাকা দেয়, তখন কাফনের কাপড় কিনে মাটি দিই। না হলে পুলিশ যেই ব্যাগ দেয়, সেই ব্যাগে ভরেই লাশ মাটিচাপা দিতে হয়। তা ছাড়া কবরস্থানের জায়গাটা সুবিধার না। কবর দিলে চিহ্ন রাখা মুশকিল কোনটি কার লাশ!’

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ইমায়েদুল জাহেদী বলেন, ‘লাশ দাফনের খরচ হিসেবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু ১ হাজার ২০০ টাকা দেয়। এটা দিয়েই ম্যানেজ করে কাজটা শেষ করতে হয়। এখানে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কোনো শাখা না থাকায়, এসব অজ্ঞাতনামা মরদেহ দাফন কাফনের সমস্যা হচ্ছে। বেশির ভাগ মরদেহেরই পরিচয় মিলে না।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘অজ্ঞাতনামা মরদেহের ছবি তুলে সারা দেশের প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে জানানো হয়। আঙুলের ছাপ সংগ্রহ, ডিএনএ স্যাম্পল রাখা হয়, যেন পরবর্তী সময়ে স্বজনেরা সহজে মরদেহ চিহ্নিত করতে পারেন। অনেক সময় মরদেহগুলো বিকৃত হয়ে যায়। তখন নমুনা সংগ্রহ করে পরিচয় বের করা কষ্টকর হয়। আবার অনেক পরিবার তেমনভাবে খোঁজাখুঁজিও করেন না। আমরা চেষ্টা করি মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত