Ajker Patrika

মুগ্ধতা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৫৬
মুগ্ধতা

মুগ্ধতার সঙ্গে অল্প বয়সের একটা যোগ আছে। বৈচিত্র্যময় হলে নতুন যা দেখা হয় তা দেখেই মুগ্ধ হয় মানুষ। প্রথমবার দেখার, শোনার বা পড়ার যে তৃপ্তি, সেটা থেকে যায় আজীবন। হাসান আজিজুল হকের সে রকম অভিজ্ঞতা আছে।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতি মোহন লাল গঙ্গোপাধ্যায় এরিক মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ বইটি অনুবাদ করেছিলেন। যখন ম্যাট্রিক দিচ্ছেন, সে সময় হাসানের হাতে আসে বইটি। তীব্র নাড়া দিয়েছিল সে বই। এরপর ‘পথের পাঁচালী’। এই বইটি নিয়ে গেল অন্য আরেক জগতে। তারপর রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প। পড়ে মুক্ত হওয়ার এই যে আনন্দ, সেটা সে বয়সে যেভাবে পেয়েছেন, বড় হয়ে ততটা পাননি।

হেমিংওয়ের ‘ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ পড়ে তখন খুব ভালো লেগেছিল। এই মুগ্ধতার রেশ ছিল সারা জীবন। বুদ্ধি বলবে, বইটি খুব অসাধারণ কিছু নয়। কিন্তু মন বলবে, এর মতো সৃষ্টি কটা আর আছে?

বুদ্ধি দিয়ে সাহিত্যের মান নির্ণয় এক কথা, বই পড়ে মুগ্ধ হওয়া আরেক কথা।

হাসান আজিজুল হকের মনের এ অবস্থা যেকোনো পাঠক উপলব্ধি করেন। এমন কোনো বই কখনো কখনো ভালো লেগে যেতে পারে, যা বোদ্ধামহলের কাছে দাম পায় না। কিন্তু তাতে কি ভালো লাগাটা নষ্ট হয়ে যায়?

এ কারণেই হাসান আজিজুল হক বলতে পারেন, ‘তারাশঙ্করের কোনো বই আমি আর দ্বিতীয়বার পড়ব না, শুধু “গণদেবতা” আর “কবি” ছাড়া। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব বই সারা জীবন বারবার পড়ব। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র পড়ব।’ এরপর বলেছেন অবাক করা এক কথা। ‘শরৎচন্দ্র আমাকে একসময় পাগল করে ফেলেছিল প্রায়, সেই শরৎচন্দ্র এখন আমার কাছে একদম ফিকে হয়ে এসেছে।’ এ কথা বলে হাসান আজিজুল হক তার ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘আসলে তাঁর লেখা আমার কাছে রূপকথার ঢঙে লেখা একধরনের ইচ্ছাপূরণের গল্পের মতো মনে হয়!’

কিন্তু তাতে কেউ মুগ্ধ হলে দোষ দেওয়া যাবে না।

সূত্র: শাহাদুজ্জামান, কথাপরম্পরা, পৃষ্ঠা ৪৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত