Ajker Patrika

কূটনীতিকদের বাড়াবাড়ি

সম্পাদকীয়
কূটনীতিকদের বাড়াবাড়ি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, মারমুখী অবস্থান নতুন কোনো বিষয় নয়। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশের মাধ্যমে অনধিকারচর্চা করা হচ্ছে বলেই মনে করা হয়।

একদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্র এবং নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যাশার বিরোধিতা করে ইদানীং প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। বাংলাদেশকে ঘিরে ভূরাজনীতির গুরুত্ব নতুন কিছু নয়। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হলেও, ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের গুরুত্ব না কমে বরং বেড়েছে।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা তৎপরতা শুরু করার পর এখন রাশিয়াসহ অন্যদেরও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। ভারত, চীনও আর মুখ বন্ধ করে নেই। শুক্রবার আজকের পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ নিয়ে রুশ-মার্কিন পাল্টাপাল্টি’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কটন ইউএসএ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় শ্রমনীতি ও শক্ত শ্রম আইন থাকা এবং এর বাস্তবায়ন স্থিতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য অন্যতম মুখ্য বিষয়। কাজের পরিবেশের দিক থেকেও মার্কিন কোম্পানিগুলো এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

প্রায় একই সময়ে অন্য এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভি মান্তিৎস্কি বলেছেন, মার্কিনরা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাই নিক, তার পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাহাস হয়েছে। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ মার্কিন সরকারের তৎপরতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে সরকারের অনেকে মনে করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১ ডিসেম্বর ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, পিটার হাস মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁর আচরণের সীমা মেনে চলবেন বলে আশা করে সরকার। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে তাঁর অবস্থান নেওয়া উচিত নয়।

দেশের রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ যেভাবে বিদেশি দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করেন, তা লজ্জাজনক। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর জন্য যাঁরা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানান, তাঁদের মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান পারস্পরিক আলোচনা ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় করাটাই সমীচীন।

বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কেমন হবে, সেটা আমাদের জনগণই ঠিক করবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রেষারেষিতে বিদেশিরা খবরদারি করার সুযোগ পাচ্ছে। মেরুদণ্ড সোজা না হলে এমনই হয়। দেশের রাজনীতি যত দিন সুস্থ ধারায় ফিরে না আসবে, তত দিন বিদেশি অনুঘটকদের অযাচিত মন্তব্য, অযথা নাক গলানোর প্রবণতাও দূর হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ছাত্রদলের বহিষ্কৃত ২ নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত