Ajker Patrika

‘স্মৃতির মিনার’

আলাউদ্দিন আল আজাদ
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৮
‘স্মৃতির মিনার’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। সারা দিন ক্লাস করে বিকেলে যেতেন পাঠাগারে। পড়াশোনা করতেন। বিকেলে অবশ্য তাঁর যেতেই হতো নির্দিষ্ট একটি জায়গায়। ছোট্ট কাঁচা একটি ঘর। প্রতিষ্ঠানও। নাম পুঁথিপত্র প্রকাশনী। নতুন-পুরোনো নানা রকম বই থাকত সেখানে। বিক্রির জন্য। আলাউদ্দিন আল আজাদের লোভ ছিল অবশ্য ময়লা মলাটের তামাদি বইগুলোর দিকে। সেগুলোর পাতা উলটিয়ে পড়তেন তিনি। আর ছিল আড্ডার লোভ। কমরেড সুলতানের এই প্রকাশনীতে তখনকার ছাত্রনেতারা এসে যে আড্ডা দিতেন, সেটা ছিল বাড়তি পাওনা।

একুশের প্রথম সংকলনের জন্য সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমান বহুদিন ধরে কবিতা চাইছিলেন। আলসেমির কারণে আলাউদ্দিন আল আজাদ দিচ্ছিলেন না।

একদিন ক্লাস থেকে ফিরছেন আজাদ। দেখা হয়ে গেল মোহাম্মদ সুলতানের সঙ্গে। সুলতান হেসে বললেন, ‘লেখাটি এখনো দেননি বুঝি?’ সেই সংকলনের প্রকাশক ছিলেন সুলতান।

আলাউদ্দিন আল আজাদ লজ্জা পেয়ে বললেন, ‘জি না। একটা কবিতা লেখা আছে, শুনবেন?’

‘নিশ্চয়ই শুনব, পড়ুন।’

হাতের খাতাটাতেই লেখা ছিল সে কবিতা। আজাদ পড়লেন, স্মৃতিস্তম্ভ কবিতাটি।

মোহাম্মদ সুলতান আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আমরা এটা নেব।’

‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনটি ছাপা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু খুব দ্রুত সেটা বাজেয়াপ্ত করল সরকার। তছনছ করা হয়েছিল মোহাম্মদ সুলতানের পুঁথিপত্র প্রকাশনী।

আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রমাদ গুনলেন। কবিতাটি বুঝি আর ছাপার অক্ষরে দেখতে পাওয়া যাবে না।

কিন্তু কিছুদিন পর একদিন আলাউদ্দিন আল আজাদ দেখলেন, মোহাম্মদ সুলতান একটা বই খুলে পড়ছেন,

‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?

ভয় কি বন্ধু?’

আলাউদ্দিন আল আজাদের মনে তখন হাজারো জোনাকি উড়ছে।

সূত্র: আলাউদ্দিন আল আজাদ, স্মৃতি জোনাকিরা, মোহাম্মদ সুলতান, কয়েকটি রেখায়, পৃষ্ঠা ১৫৩-১৫৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত