হাবিবুর রহমান
সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের মলিন মুখ ও হতাশাগ্রস্ত চেহারা দেখে ভীষণভাবে পীড়িত বোধ করলাম। দরিদ্র পরিবারগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিবারে চার বা পাঁচটি পুত্রসন্তান থাকলেও তারা কেউই বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। ফলে এসব পরিবারের বয়োবৃদ্ধ মানুষদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজেদেরই বহন করতে হচ্ছে। শেষ বয়সে ভগ্ন শরীরে এই গুরুদায়িত্ব পালনে তাঁরা একেবারে অপারগ। কিন্তু তাঁরা নিরুপায়। ফলে অর্ধাহার ও অনাহার তাঁদের নিত্যসঙ্গী। অনেক প্রবীণ মানুষ সরকারের মাসিক বয়স্ক ভাতা পান, যার পরিমাণ ৫০০ টাকা; যা দিয়ে জীবনযুদ্ধের ভার কিছুটা হালকা হলেও তাঁদের দুঃখ ও যন্ত্রণার অবসান কবে হবে, তা তাঁরা জানেন না।
বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম কল্যাণমূলক উদ্যোগ বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের মাসিক ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দিয়ে থাকে। ১৯৯৭-৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই অনন্য কল্যাণকর কর্মসূচি চালু করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমানে দেশের ৫৭ লাখ বয়স্ক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতির সময়ে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা একান্ত অপরিহার্য। এই কঠিন সময়ে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি পরিবারের পক্ষে ৩০ দিন পার করা কি আদৌ সম্ভব?
বর্তমান বাজারমূল্যে এক কেজি মোটা চালের ন্যূনতম মূল্য ৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রবীণেরা প্রায়ই নানা ধরনের রোগে ভোগেন। যে কারণে প্রতিদিনই তাঁদের কোনো না কোনো ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করা ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক। বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলো অন্তত যেন দুবেলা, দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, সেই পরিমাণ অর্থ ভাতা দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাসিক বয়স্ক ভাতা ১ হাজার টাকা করা হলে অসহায় মানুষগুলো অন্তত পেটপুরে দুবেলা খেতে পারবেন। আর এটা করতে সরকারের ব্যয় হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ ২০২২-২৩ সালের সরকারের ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ। সরকার আন্তরিকভাবে চাইলেই চলতি বাজেট থেকে এ অর্থ অনায়াসেই জোগান দেওয়া সম্ভব।
অপরদিকে বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির জন্য যে ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। সরকারি কর্মচারীরা ৬০ বছর বা আরও আগে অবসর গ্রহণ করতে পারেন এবং পূর্ণ অবসর ভাতা পান। তাহলে বয়স্ক ভাতার জন্য নারীদের ৬২ বছর এবং পুরুষদের ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন? এটি আমাদের সংবিধানে বর্ণিত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কৃষিকাজ, ছোটখাটো ব্যবসা এবং কায়িক শ্রমনির্ভর সাধারণ মানুষের জীবন কষ্টকর ও যন্ত্রণাক্লিষ্ট। নানাবিধ অভাব-অভিযোগ ও আর্থিক টানাপোড়েনে এসব মানুষ কম বয়সেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন এবং পরিবারের বোঝা হন। তাই বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা ৬০ বছর বয়স হওয়াই যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সংগত।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করবে, অন্যদিকে সমাজের দরিদ্র, অনগ্রসর শ্রেণি ক্রমাগত বঞ্চিত হতে থাকবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই বঞ্চনা ও বৈষম্য জারি রেখে কি আমরা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব?
বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ মানুষদের মলিন ও হতাশাগ্রস্ত মুখ যেন আমাদের পরিবেশকে ভারাক্রান্ত না করে, সেদিকে রাষ্ট্রের অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। জীবনের সবটুকু প্রাণশক্তি উজাড় করে যাঁরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধিতে আত্মোৎসর্গ করেছেন, জীবনের শেষ সময়টুকু যেন তাঁরা একটু স্বস্তিতে এবং শান্তিতে অতিবাহিত করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সরকার তথা প্রত্যেক সচেতন ও সামর্থ্যবান মানুষের পবিত্র দায়িত্ব। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের জীবন দুশ্চিন্তামুক্ত, শঙ্কাহীন, নির্ভার ও আনন্দময় হোক।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও উন্নয়নকর্মী
সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের মলিন মুখ ও হতাশাগ্রস্ত চেহারা দেখে ভীষণভাবে পীড়িত বোধ করলাম। দরিদ্র পরিবারগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিবারে চার বা পাঁচটি পুত্রসন্তান থাকলেও তারা কেউই বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। ফলে এসব পরিবারের বয়োবৃদ্ধ মানুষদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজেদেরই বহন করতে হচ্ছে। শেষ বয়সে ভগ্ন শরীরে এই গুরুদায়িত্ব পালনে তাঁরা একেবারে অপারগ। কিন্তু তাঁরা নিরুপায়। ফলে অর্ধাহার ও অনাহার তাঁদের নিত্যসঙ্গী। অনেক প্রবীণ মানুষ সরকারের মাসিক বয়স্ক ভাতা পান, যার পরিমাণ ৫০০ টাকা; যা দিয়ে জীবনযুদ্ধের ভার কিছুটা হালকা হলেও তাঁদের দুঃখ ও যন্ত্রণার অবসান কবে হবে, তা তাঁরা জানেন না।
বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম কল্যাণমূলক উদ্যোগ বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের মাসিক ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা দিয়ে থাকে। ১৯৯৭-৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই অনন্য কল্যাণকর কর্মসূচি চালু করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমানে দেশের ৫৭ লাখ বয়স্ক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতির সময়ে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা একান্ত অপরিহার্য। এই কঠিন সময়ে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি পরিবারের পক্ষে ৩০ দিন পার করা কি আদৌ সম্ভব?
বর্তমান বাজারমূল্যে এক কেজি মোটা চালের ন্যূনতম মূল্য ৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রবীণেরা প্রায়ই নানা ধরনের রোগে ভোগেন। যে কারণে প্রতিদিনই তাঁদের কোনো না কোনো ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করা ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক। বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলো অন্তত যেন দুবেলা, দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, সেই পরিমাণ অর্থ ভাতা দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাসিক বয়স্ক ভাতা ১ হাজার টাকা করা হলে অসহায় মানুষগুলো অন্তত পেটপুরে দুবেলা খেতে পারবেন। আর এটা করতে সরকারের ব্যয় হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ অর্থ ২০২২-২৩ সালের সরকারের ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বিশাল বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ। সরকার আন্তরিকভাবে চাইলেই চলতি বাজেট থেকে এ অর্থ অনায়াসেই জোগান দেওয়া সম্ভব।
অপরদিকে বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির জন্য যে ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। সরকারি কর্মচারীরা ৬০ বছর বা আরও আগে অবসর গ্রহণ করতে পারেন এবং পূর্ণ অবসর ভাতা পান। তাহলে বয়স্ক ভাতার জন্য নারীদের ৬২ বছর এবং পুরুষদের ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন? এটি আমাদের সংবিধানে বর্ণিত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কৃষিকাজ, ছোটখাটো ব্যবসা এবং কায়িক শ্রমনির্ভর সাধারণ মানুষের জীবন কষ্টকর ও যন্ত্রণাক্লিষ্ট। নানাবিধ অভাব-অভিযোগ ও আর্থিক টানাপোড়েনে এসব মানুষ কম বয়সেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন এবং পরিবারের বোঝা হন। তাই বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তির যোগ্যতা ৬০ বছর বয়স হওয়াই যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়সংগত।
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী রাষ্ট্রের সব সুবিধা ভোগ করবে, অন্যদিকে সমাজের দরিদ্র, অনগ্রসর শ্রেণি ক্রমাগত বঞ্চিত হতে থাকবে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই বঞ্চনা ও বৈষম্য জারি রেখে কি আমরা উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব?
বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রবীণ মানুষদের মলিন ও হতাশাগ্রস্ত মুখ যেন আমাদের পরিবেশকে ভারাক্রান্ত না করে, সেদিকে রাষ্ট্রের অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। জীবনের সবটুকু প্রাণশক্তি উজাড় করে যাঁরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধিতে আত্মোৎসর্গ করেছেন, জীবনের শেষ সময়টুকু যেন তাঁরা একটু স্বস্তিতে এবং শান্তিতে অতিবাহিত করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সরকার তথা প্রত্যেক সচেতন ও সামর্থ্যবান মানুষের পবিত্র দায়িত্ব। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের জীবন দুশ্চিন্তামুক্ত, শঙ্কাহীন, নির্ভার ও আনন্দময় হোক।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও উন্নয়নকর্মী
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ ঘণ্টা আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫