Ajker Patrika

হেলেন বিচার পাননি

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ২২
হেলেন বিচার পাননি

হেলেনের দোষ ছিল কী? হেলেন দেশকে ভালোবাসতেন। কারা হেলেনকে ধরিয়ে দিল? রাজাকারেরা। রাজাকারেরা হেলেনকে ধরে তুলে দিল পাকিস্তানি অফিসারদের হাতে।

মাগুরার মেয়ে হেলেন ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তাঁর ভাই মাহফুজুল হক ছিলেন বামপন্থী নেতা। ডাক নাম নিরো। মাগুরায় তিনি ‘নিরো’ প্রফেসর নামে পরিচিত ছিলেন। ভাইয়ের সংস্পর্শে এসে হেলেন নিজেও ছাত্রজীবন থেকে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। একসময় মাগুরা মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিও হয়েছিলেন।

হেলেন ছিলেন মাগুরা বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বামী আলী কদর ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এলাকায় রাজাকার, আলবদররা পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিশে কী করে চলেছে, সে খবর গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন হেলেন। গোপনে সাহায্য করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। অক্টোবর মাসে মাগুরার মহম্মদপুরের কোনো এক গ্রামে যখন অবস্থান করছিলেন, তখন তিনি রাজাকারদের চোখে পড়ে যান। এই এলাকার কুখ্যাত রাজাকার রিজু-কবীররা মিলে যখন হেলেনকে ধরে ফেলে, তখন হেলেনের কোলে ছিল দুই বছর চার মাস বয়সী শিশুপুত্র দিলীর।

হেলেনকে শিশুপুত্রসমেত নিয়ে আসা হয় পাকিস্তানি ক্যাম্পে। শিশুপুত্রকে হেলেনের বাবা-মায়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি অফিসাররা পাশবিক অত্যাচার চালাতে থাকে হেলেনের ওপর। মাগুরাবাসী ফুঁসতে থাকে। কিন্তু তখন রাজাকারদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে গ্রামবাসীর পক্ষে জোরালো প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।

অত্যাচারের পর অর্ধমৃত হেলেনকে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি জিপের পেছনে বেঁধে শহর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে নবগঙ্গা নদীর ডাইভারশন ক্যানেলে ফেলে দেওয়া হয়। তাঁর লাশ আর পাওয়া যায়নি। সেটা ছিল ৪ অক্টোবর।

রিজু-কবীরসহ রাজাকাররা এই নৃশংসকাণ্ডে মদদ জুগিয়েছিল। একজন মুক্তিকামী নারীকে পাকিস্তানিদের শরীরের স্বাদ মেটানোর জন্য সঁপে দিয়েছিল যে রাজাকাররা, তাদের বিচার হয়নি।

 

সূত্র: জাহিদ রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মাগুরার শত শহীদ, পৃষ্ঠা ২৩-২৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত