Ajker Patrika

বিশ্ব ঐতিহ্য এখন গোচারণ ভূমি

এস এস শোহান, বাগেরহাট
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ২১
বিশ্ব ঐতিহ্য এখন গোচারণ ভূমি

দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর বাগেরহাট। এ শহরের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি। বাগেরহাট শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিকল্পিত নগর গড়ে ওঠার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ইসলামি শাসক ও আধ্যাত্মিক পীর খানজাহান আলীর (রহ.) নাম। তাঁর নির্মিত ইসলামি স্থাপত্য রীতির মসজিদগুলোর জন্যই ১৯৮৫ সালে বাগেরহাটকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা করে ৩২১তম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে ইউনেসকো।

এর মধ্যে বাগেরহাটের ১৭টি স্থাপনাকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো, ষাট গম্বুজ মসজিদ, বিবি বেগুনি মসজিদ, চুনাখোলা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, জিন্দা পীরের মসজিদ, দশ গম্বুজ মসজিদ, রন বিজয়পুর মসজিদ, রেজা খোদা মসজিদ, সিংগাইর মসজিদ, জিন্দা পীরের মসজিদ, এক গম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর (রহ.) সমাধি, পীর আলী তাহেরের সমাধি, জিন্দা পীরের সমাধি, সাবেক ডাঙ্গা প্রার্থনা কক্ষ, খান জাহান আলীর (রহ.) বসতভিটা, বড় আদিনা ডিবি, খান জাহান আলীর (রহ.) তৈরি প্রাচীন রাস্তা।

ষাট গম্বুজ মসজিদের ২৫০ মিটার উত্তরে ৯ দশমিক ৬৭ একর জায়গা নিয়ে খানজাহান আলীর (রহ.) বসতভিটা। সংরক্ষণের অভাবে এ ভিটাই এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে জনবলসংকটে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খানজাহান আলীর (রহ.) বসতবাড়ির জায়গায় গরু চরে বেড়াচ্ছে। উঁচু ডিবি কেটে মাটি নিয়ে গেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বসতবাড়ির ইট নিয়ে বাড়িতে ব্যবহার করছেন অনেকে। কিছু খেজুর ও মেহগনি গাছও জন্মেছে। একটি বিদ্যুতের খুঁটিও স্থাপন করা হয়েছে ওই জায়গার মধ্যে। সব মিলিয়ে ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ খানজাহানের বসতভিটা এখন পতিত জমিতে পরিণত হয়েছে। যে যার মতো ব্যবহার করছে।

বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোল্লা মাসুদুল হক বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ খানজাহানের বসতভিটা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খননের মাধ্যমে যেটুকু দৃশ্যমান করেছে, তাও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে।

খানজাহান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ খানজাহান আলীর (রহ.) বসতভিটা দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত রয়েছে। ফলে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বসতভিটার ইট ও মাটি খুঁড়ে নিচ্ছে এবং জায়গাটিকে উচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। যত দ্রুত সম্ভব জায়গাটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তা না হলে খানজাহান আলীর (রহ.) বসতভিটার চিহ্ন হারিয়ে যাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইউনেসকো শুধু ষাট গম্বুজকে নিয়ে বাগেরহাট মসজিদের শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যান্য সব স্থাপত্য নিয়েই বাগেরহাট মসজিদের শহর হয়েছে। তাই সব স্থাপনা সংরক্ষণ করে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার মান রক্ষা করা খুবই জরুরি। সেটা না হলে তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ছাড়া বাগেরহাটের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদের ওপর আরও জরিপ, অনুসন্ধান ও খনন করে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদকে সমৃদ্ধ করার দাবি জানান তিনি।

ষাট গম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, বাগেরহাটে অনেকগুলো নিদর্শন রয়েছে। পর্যটকেরা এসে ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণ ছাড়া অন্য নিদর্শনগুলোও ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকায় পর্যটকেরা অস্বস্তিবোধ করেন। খানজাহান আলীর (রহ.) বসতভিটাসহ সব স্থাপনাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার দাবি জানান তিনি।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত সব স্থাপনাকে ফেন্সিং অথবা বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে। প্রস্তাবনা পাস হলে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা রক্ষা করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

মো. যায়েদ আরও বলেন, খানজাহান আলীর (রহ.) বসতভিটা অবশ্যই প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বসম্পন্ন একটি স্থাপনা। প্রতিবছরই এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা ও নিদর্শন আবিষ্কারের জন্য খননকাজ করা হয়। এ বছরও খননের পরিকল্পনা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত