Ajker Patrika

উপাচার্য!

সম্পাদকীয়
উপাচার্য!

সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল অর্থ পাচারের। এর সত্যতা পেল ইউজিসি। অভিযোগ অবশ্য এই একটিই নয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে বেতন বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব কাজ তিনি করেছেন আচার্যের অনুমতি ছাড়া—ভাবা যায়!

উপাচার্য মহাশয়ের কাণ্ডকারখানা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পদক পাওয়ানোর জন্য তিনি একটি কোম্পানির কাছে টাকা পাঠিয়েছেন। এই লেনদেনটা অর্থ পাচার হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। এটা খুবই লজ্জার কথা।

প্রচলিত মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নিয়ে যে ধারণা রয়েছে, তা যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই নস্যাৎ হয়ে চলেছে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মানুষটিকে তো হতে হবে সবচেয়ে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন। তাঁর কথাবার্তা, আচার-আচরণের ওপর প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নির্ভর করে। তিনি যদি সেই সম্মান ধরে রাখতে না পারেন, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তা অন্য কিছু দিয়েই পূরণ হওয়ার নয়।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এখন উপাচার্যদের ব্যাপারে নানা কথা শোনা যায়। এমন এক সময় এসেছে, যখন সরকারি দলের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিই উপাচার্য হওয়ার সম্মান অর্জন করছেন। যোগ্য লোক হলে কথা নেই। কখনো কখনো এমন মানুষ উপাচার্য হয়ে যাচ্ছেন, যাঁর কার্যক্রমে থাকছে সরকারি দলের ছায়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও উপাচার্যদের নিয়ে যে অস্বস্তি আছে, তা সিলেটের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যক্রমে দৃশ্যমান।

মানছি, উপাচার্যের পদটি একটি প্রশাসনিক পদ। কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তিনি কোন বিষয়ে সবার আগে নজর দেবেন, সেটা নিয়ে কি ভাবার কোনো অবকাশ আছে? শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার উপযুক্ত ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। তিনি দৃষ্টি রাখবেন কীভাবে গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো যায়, সেদিকে। শিক্ষার্থীরা কতটা শিক্ষার পরিবেশ খুঁজে পাচ্ছেন, তাঁদের আবাসস্থলের সংকটের সমাধান হলো কি না, এগুলো দেখভালের দায়িত্বও একজন উপাচার্যের ওপর বর্তায়।

কিন্তু এ কী দেখছি আমরা! দেখছি, উপাচার্য অর্থ পাচার করছেন! নিজের বেতন বাড়িয়ে নিচ্ছেন! আবার এমনও দেখা গেছে, কোনো উপাচার্য দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও বেতন-ভাতা নিয়ে চলেছেন। দেখা গেছে, নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে জড়িত আছেন উপাচার্য!

কথা না বাড়িয়ে এ কথা বলা দরকার, চাইলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারেন সেই প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য। আবার চাইলে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারেন। সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই দুটির কোন পথটি বেছে নিয়েছেন, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। এহেন কর্মকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া গেলে ইউজিসি কি শুধু ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ হয়েই ‘ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনের জন্য’ নির্দেশ দিয়ে যাবে? এটাই কি শাস্তি?

একজন উপাচার্যের নামের সঙ্গে ‘শাস্তি’ শব্দটি বেমানান। আমরা আশা করব, শিক্ষা নামের আলোর কারিগরেরা নিজেদের মানসম্মান রক্ষা করার চেষ্টা করবেন। এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়াবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত