Ajker Patrika

আফছারউদ্দিনের ‘পাডার লোশডো’

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২৩
আফছারউদ্দিনের ‘পাডার লোশডো’

বরিশালে অবস্থাপন্ন রায়তদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা একসময় বিলাসের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কখনো কখনো শোনা যেত, বর্ধিঞ্চু প্রজারা, মানে এখন যাঁদের জোতদার বলা হয়, তাঁরা ফসল ভালো হলে ভীষণ আনন্দিত হয়ে যেতেন এবং একই সঙ্গে চিন্তায় পড়ে যেতেন। তারপর সুহৃদকে প্রশ্ন করতেন, ‘কয়েন দেহি বড়মেয়া, আর এড্ডা নিকা করি না চাচার লগে আরেগডা মোকদ্দমা বাঁধাই?’

মামলা বাঁধানো নিয়ে কত কাহিনিই তো আছে। তপন রায়চৌধুরী শোনাচ্ছেন সে রকমই একটা কাহিনি। আফছারউদ্দিন এবং আজহারউদ্দিন দুই ভাই। মারামারি করতে করতে তাঁরা একে অপরের মাথায় রামদা বসিয়ে দেন। তখন ব্রিটিশ আমল। বিচারে দুজনকেই আন্দামানে পাঠানো হয়।

আন্দামানে এই দুই ভাই দুজন বীর রমণীর সাক্ষাৎ পান, তাঁরাও দু-চারটি মানুষের মাথায় অস্ত্র প্রয়োগ করে আন্দামানবাসী হয়েছিলেন। দুই ভাই ওই দুই রমণীকে বিয়ে করেন। তাঁরা সুখী জীবনযাপন করেন, তবে অতীতের কীর্তি হিসেবে তাঁদের বাড়ির বাঁশের বেড়ায় ঝোলানো থাকত রামদা।

আফছারউদ্দিনের ছিল অসাধারণ রান্নার হাত। আন্দামানে তাঁর সদাচরণের জন্য কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সাহেব তাঁকে জেলের বাইরে বসবাস করার অনুমতি দেন। একসময় তিনি বুঝতে পারেন, এই লোকের রান্নার হাত ভালো। মেমসাহেবকে দিয়ে তিনি তাঁকে পাকা বাবুর্চি করে তোলেন।

এই আফছারউদ্দিনই ভালো ব্যবহারের সুবাদে দেশে ফিরে এসে তপন রায়চৌধুরীদের বাড়িতে বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ পান। যে হাতে উঠত রামদা, সেই হাতই তৈরি করতে থাকে লোভনীয় ব্যঞ্জন। আফছারউদ্দিনের ভাষায় সেগুলোর নাম ছিল এ রকম: ‘পাডার লোশডো’ (পাঁঠার রোসটো, অর্থাৎ রোস্ট), ‘তুর্কির লোশডো’ (টার্কির রোস্ট), ‘মুলাখাডুনির স্যুপ’ (মালিগাটানি স্যুপ), ‘এক লাইস রোটি দিয়া পুঠিন’ (এক স্লাইস রুটি দিয়ে তৈরি ব্রেড পুডিং)।

আফছারের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার কারণে বাইরের মানুষ বলত, ‘একদিন তোমাগো কোপাইবে।’ কিন্তু আফছার কোনো দিন আর মানুষ কোপাননি। তাঁর কোপ পড়ত শুধুই পাঁঠা-মুরগির ওপর।

সূত্র: তপন রায়চৌধুরী, রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা, পৃষ্ঠা-৩৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত