Ajker Patrika

শত বছরের ঐতিহ্য

সম্পাদকীয়
শত বছরের ঐতিহ্য

মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের গোসাইবাগ গ্রামটির কথা বলতে চাই। এখানে পঞ্চায়েত কমিটির উদ্যোগে এবং সরাসরি তত্ত্বাবধানে কোরবানির কাজটি করা হচ্ছে। এটা তাদের

শত বছরের ঐতিহ্য। এলাকায় যাঁরা পশু কোরবানি দেবেন, তাঁরা সবাই কোরবানির জন্য কেনা সব পশুকে এক জায়গায় নিয়ে আসেন এবং নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দেন। যিনি কোরবানি দিচ্ছেন, তাঁকে মাংসের তিন ভাগের দুই ভাগ দিয়ে দেওয়া হয়, বাকি অংশ এলাকায় দুস্থ মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত কমিটি সুচারুভাবে বিষয়টির দেখভাল করে থাকে।

বিষয়টি আরও নজর কাড়ে এ জন্য যে সমাজের সব পরিবারই কার্ডধারী। কার্ড দেখে মাংস বিতরণ করা হয় বলে বিতরণে দুর্নীতির কোনো প্রশ্রয় থাকে না। একখানে কোরবানি হচ্ছে বলে পরিবেশদূষণের হাত থেকে এলাকা যেমন রক্ষা পায়, তেমনি স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণে কোরবানির সব কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়। এলাকার সব পশু এক জায়গায় এনে কোরবানি দেওয়ায় একটা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেউ মাংস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে না, এই আবহ বজায় থাকে।

আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি মনের পশুত্বকে কোরবানি দেওয়ার কথা। কথাটা শুনতে খুব ভালো হলেও কাজটি করা খুব কঠিন। আমাদের দেশে যাঁরা দুর্নীতিবাজ, তাঁরাও পশু কোরবানি দেন, কিন্তু তাঁদের মনের পশুত্ব কি আর দূর হয়? সে তো মনেই থেকে যায়। মন এ রকম কলুষে ভরা থাকলে সেই কোরবানি কতটা সফল হয়, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। অনেকের মধ্যে কোরবানির নামে বিত্ত প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা দেখা যায়। কে কত টাকা দামের গরু কিনল, কে গরু কিনতে গিয়ে জিতল, কে হারল—এসব আলোচনাও দেখা যায়। গরুর মালিক কত টাকা পেলেন আর কতটা হাতিয়ে নিল মধ্যস্বত্বভোগীরা, সেদিকে নজর দিলেও একটা কষ্টকর বাস্তবতা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সবকিছু অগ্রাহ্য করে একটি গ্রাম তাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কোরবানির পুষ্টির জোগান দিচ্ছে, এটা ভেবেই ভালো লাগছে।

সরকারি বহু তহবিল আছে, যেখান থেকে দুস্থ মানুষকে সাহায্য করা হয়। অনেক সময় এই সাহায্য নিয়ে দুর্নীতি হয় বলে পত্রিকায় খবর বের হয়। সরকারি কর্মকর্তা কিংবা স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা এই সাহায্যের একটা অংশ আত্মসাৎ করেন। তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের অবস্থাপন্ন আত্মীয়দের ঢুকিয়ে দেন এই দুস্থ তালিকায় এবং দরিদ্র বহু পরিবার তাতে সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকে। গোসাইবাগ গ্রামটিতে সে রকম কোনো দুর্নীতি ঢুকতে পারেনি। শত বছরের ঐতিহ্য অনুযায়ী গ্রামটি তার সন্তানদের দেখে রাখছে। এটা সম্ভব হয়েছে গ্রামের পঞ্চায়েতের জন্য। শত বছর ধরে বিষয়টি খেয়ালে রাখা হচ্ছে বলেই এই শৃঙ্খলাবদ্ধ ঐতিহ্যটি টিকে থাকতে পারছে।
আমাদের প্রতিবেদক খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, সুষ্ঠুভাবে কোরবানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়াও আরও কিছু সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে পঞ্চায়েত জড়িত। এ গ্রামটির অর্জিত অভিজ্ঞতা অন্যরা গ্রহণ করলে অন্য এলাকাতেও এর সুফল ছড়িয়ে পড়বে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত